রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে, হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে শত শত ডায়রিয়া রোগীকে বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে গরমে হাঁসফাঁস করতে শুরু করেছে রামেকে চিকিৎসাধীন রোগী। মার্চ মাসের শুরু থেকেই ভ্যাপশা গরমে রাজশাহীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ার প্রভাব আরও বেড়েছে।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতমাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ১৬৩৫ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। গতকাল শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে ৭২ জন রোগীর ভর্তি হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সরেজমিনে রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে- ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। কিছু কিছু ওয়ার্ডে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলাদা করে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে রোগীর সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে আলাদা করে চিকিৎসা দিলেও প্রতিদিন হাসপাতালে যেহারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে হাসপাতালের ওয়ার্ডের শয্যা কিংবা মেঝে ঠাসাঠাসি করেও তাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেই এখন ডায়রিয়া রোগীদের জন্য চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল। ফলে বারান্দায় ফ্যান না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

রামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মার্চ এখানে ২২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরপর ৬ তারিখ পর্যন্ত যথাক্রমে ২৭, ২৮, ২৬, ২০ ও ২৬ জন রোগী ভর্তি হন। ৭ মার্চ ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জন হয়। এরপর ১৬ মার্চ পর্যন্ত যথাক্রমে ৩১, ৩৯, ৩৮, ৩৪, ৩০, ৪০, ৪৩, ৪৮ ও ৪৫ জন করে রোগী ভর্তি হন। ১৭ মার্চ একদিনে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ৫০ জন ছাড়ায়। ১৭ ও ১৮ মার্চ ভর্তি হন ৫২ জন করে রোগী। ১৯ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন যথাক্রমে ৫৮, ৬২, ৫৯, ৭২, ৮০ ও ৮২ জন ভর্তি হন। ২৫ মার্চ রোগী বেড়ে হয় ৯০ জন। এরপর ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোজ ভর্তি হন যথাক্রমে ৮৮, ৯৯, ৭৪, ৯৩, ৬১ ও ৭৮ জন। গোটা মার্চ মাসে রামেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হয় ১৬৩৫ জন। আর গতকাল শনিবার হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭২ জন রোগী ভর্তি হয়। তাদের অধিকাংশের জায়গা হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। অনেকেই আবার বারান্দার মেঝেতেও জায়গা না পেয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গোদাগাড়ী থেকে রামেক হাসপাতালের বারান্দায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাবিবুর রহমান (৬০) নামের এক বৃদ্ধ। রোগী জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হলে তিনি গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাথ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে সুস্থ না হলে রামেক হাসপাতালে শুক্রবার ৩টার দিকে আবার ভর্তি হলেও কোন বেড পান নাই। তিনি আরও জানান, রবিবার অর্থ্যাৎ আজ অবধি তিনি সুস্থ হোন নাই,পানি শূণ্য হয়ে পড়ছে শরীর।

এদিকে গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মহী শাহিন ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ১৭নং ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, বাসাতে উনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার চেস্টা করলেও অল্প সময়ে তা প্রকট আকার ধারন করে। ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটা স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তাও কমেনি। স্যালাইনের স্ট্যান্ড ধরেই একটু পর পর বাথরুমে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের বেড না থাকায় পেইন বেডে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ছোট ছোট দুই সন্তান নিয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন রোজিনা বেগম রামেক হাসপাতালে। তিনি বলেন, হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে এবং ছোট ছোট দুই সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাড়িতেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছি। কলেরার স্যালাইন শরীরে দিচ্ছি। এছাড়া ডাবের পানি, স্যালাইন এমনকি এন্টিবায়েটিক ওষুধও খাচ্ছি। কিন্তু গত ৫ দিনেও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুর রহীম বলেন, রাজশাহীতে বেশ কয়েকদিন থেকেই রোদের প্রখরতা তীব্র সেই সাথে ভ্যাপসা গরম। যার কারণে এই অঞ্চলে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। যদিও ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। তারপরও গরম কিংবা ঠাণ্ডার প্রভাবেও ডায়েরিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। রাজশাহীতে সেটিই হয়েছে। এজন্য সবাইকে নিজ নিজ পরিবারকে নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল এটি। কিন্তু যে হারে রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন সেই তুলনায় শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল। এজন্য আমরা হাসপাতাল সম্প্রসারণ ও শয্যার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। এটি হলে এতদ অঞ্চলের রোগীদের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হবে না। আর ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায় বেড দিয়ে আবার মেঝেতে এসব রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না।