মেঘনায় নৌ পুলিশ ও জেলে সংঘর্ষে নিহত জেলে আমির হোসেনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কিছুতেই বিলাপ থামছে না বাবা-মা ও স্ত্রীর।
মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবারের সদস্যরা। এই হত্যার সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন নিহত জেলে আমির হোসেনের পরিবার।
সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের জন্য মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরায় উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবুও পেটের টানে নদীতে গিয়েছিলেন ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের চর মোহাম্মদ আলী গ্রামের জেলে আমির হোসেনসহ ১১ জেলে। কিন্তু মাছ ধরতে গিয়ে নৌ-পুলিশের গুলিতে মরতে হবে কে বা জানতো।
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি হারিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েছে আমিরের বাবা,মা ও ন্ত্রী। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা এবং প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন স্ত্রী সুরভী বেগম।
নিহত জেলে আমির হোসেন স্ত্রী সুরভী বেগম বলেন, ঘরে অভাব তাই সে বাধ্য হয়ে নদীতে মাছ ধরতে গেছে। কিন্তু সে আর ফিরে আইলো না। এখন পোলা এবং বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়িকে কে দেখবে? আমরা তো শ্যাষ হইয়া গেলাম। আমার একমাত্র পোলা (ছেলে) তো প্রতিবন্ধী। আমাগো পরিবার কে চালাইবে?।
নিহত জেলে আমিরের মা ছকিনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার পোলার দোষ নাই, স্যারেরা আমার পোলারে গুলি কইরা মাইরা ফেলাইছে। আমি পোলা হত্যার বিচার চাই।
নিহতের ভাই জামাল রাঢ়ীসহ জেলে পরিবারের অভিযোগ, যেসব জেলে ট্রলারের সঙ্গে নৌ-পুলিশের সংঘর্ষে হয়েছে তারা পার পেয়ে গেলেও বিনা দোষে পুলিশ গুলি চালিয়েছে আমির হোসেনের ট্রলারের জেলেদের ওপর।
জানা গেছে, ভোলা সদরের চর মোহাম্মদ আলী গ্রামের আমিরসহ একই এলাকার মনির, কামাল, সবুজ, সবুজ মাঝি, এমরান, মো. আলী, মোকতার ও সাইফুরসহ ১১ জেলে মনির চৌকিদারের ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। রাত ৯-১০ টার দিকে টহলরত নৌ-পুলিশের সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষ হয়। এতে এক জেলে নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।
এ ঘটনায় নৌ পুলিশ দাবি করছে জেলেদের ইটপাটকেলের আঘাতেই আমিরের মৃত্যু হয়েছে। নৌ-পুলিশের মজু চৌধুরীর ঘাটের ইনচার্জ মো. জামান বলেন, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। জেলেদের আঘাতে নৌ-পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জেলেদের নিজের ইটের আঘাতে আমির হোসেন নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।
জানতে চাইলে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুচিত কুমার হালদার বলেন, আগে ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে। তারপর যদি জেলেরা নির্দোষ হয় তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মজুচৌধরীর ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে নৌ-পুলিশের সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষে আমির হোসেন (৩০) নামে একজন জেলে নিহত হন। এসময় নিজেদের ৬ সদস্য আহত হন বলে নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করে তাদের হাসপাতালে ভর্তির কথা জানানো হয়েছে। তবে তাদের গুলিতে জেলে নিহত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে নৌ-পুলিশ কর্মকর্তারা।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন