গাজীপুরের শ্রীপুরে বন জঙ্গল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় তেঁতুলের গাছ। কবির কবিতায় তেঁতুরের বর্ণনা পাওয়া গেলেও কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ব্যাপক ঔষুধি গুণসম্পূর্ণ উদ্ভিদ তেঁতুল। প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ নানা রোগ নিরাময়ে তেঁতুল থেকে ভেষজ উপায়ে ঔষুধ তৈরির মাধ্যমে তা সেবন করে সুস্থতা লাভ করে আসছে। এক সময় মানুষ অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারতো না। ফলে মানুষ গাছ- গাছরা বা কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো।

বিভিন্ন বহুমুখী রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকারী গাছের নাম হলো তেঁতুল গাছ। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, গাছপারা কাটার মহাউৎসব, বন-জঙ্গল কেটে সাবাড় করা ও নতুন করে চারা রোপণের উদ্যোগের অভাবে এই ভেষজ গুণসম্পূর্ণ উদ্ভিদটি আজ বিলুপ্তের পথে। জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বাড়ির আঙিনায়, পুকুর পাড়ে, জঙ্গলে কিংবা রাস্তার ধারে থাকা তেঁতুল গাছ এখন আর চোখে পড়ে না। ঘরের কোণে বোতলে রাখা তেঁতুলের আচার আর খাওয়া হয়না। অথচ কতই না গুণে গুনান্বিত এই তেঁতুল ফল। গ্রামীণ অপকথা ভূত-পেতনির বাসস্থান নামে আখ্যায়িত করার অনেকে ভয়েই তেঁতুল গাছ কেটে ফেলেছে। হঠাৎ (৩ আগস্ট) বুধবার, এই প্রতিবেদকের চোখে ধরা পড়ল উপজেলার সিমলাপাড়া জঙ্গলের একটি তেঁতুল গাছ।

ভেষজবীদগণের মতে, রোগ প্রতিরোধে অনেক পদ্ধতিতে তেঁতুল ব্যবহার করা যায়। রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর কাজে বর্তমানে তেঁতুলের আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে। নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীরে মেদ জমাতে পারে না। তেঁতুলে টারটারিক এসিড থাকার কারণে খাবার হজমেও এটি দারুণ সহায়ক। পেটের বায়ু ও হাত পা জ্বলাতে তেঁতুরের শরবত খুবই উপকারি। পেটের ব্যাথা, মাথা ব্যথা, ধুতরা ও কচুর বিষাক্ততা থেকে রক্ষা পেতে তেঁতুল ফলের শাঁসের শরবত খেলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যায়। নিয়মিত খেলে প্যারালাইসিস আক্রান্ত অঙ্গের অনুভূতি ফিরে আসে। এসব উপকার পেতে সরাসরি না খেয়ে পুরানো তেঁতুলের তিন/চারটি দানা এক কাপ পানির সাথে মিশিয়ে লবণ অথবা চিনি দ্বারা সেবন করা অত্যাধিক নিরাপদ।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, তেঁতুল গাছটি আমাদের নিকট ঔষুধি গাছ হিসাবেই পরিচিত। আমাদের যখন হাঁপানি, চোখ জ্বালাপোড়া ও দাঁত ব্যথা করতো তখন আমাদের বাবা- মা এই তেঁতুল গাছের চূর্ন ব্যবহার করতো। মূখের ভিতরের ক্ষত সারাতে তেঁতুল পাতা সিদ্ধ মুখে নিয়ে দুই তিন দিন চার/পাঁচ বার গড়গড়া করলে আরোগ্য পাওয়া যায়। একই পানি দ্বারা শরীরের যেকোন নতুন বা পুরানো ক্ষত স্থান ধুয়ে দিলে ক্ষত স্থান দ্রুত শুকিয়ে যায়।

তারা আরো জানান, যদি এই ঔষুধি গুণসম্পূর্ণ গাছটিকে সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় ও চারা রোপণের মাধ্যমে টিকিয়ে না রাখা হয় তাহলে একদিন হয়তো প্রকৃতি থেকে চিরচেনা তেঁতুল গাছটি হারিয়ে যাবে। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আঃ কুদ্দুস মিয়া জানান, দেশি তেঁতুল গাছে ফলন আসতে খুব সময় লাগে তাছাড়া সন্তোষজসক ভাবে ফলন না হওয়াই আজ বিলুপ্তের পথে দেশীয় তেঁতুল গাছ। তবে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা মেলার মাধ্যমে এই দেশীয় তেঁতুল গাছের গুরুত্ব তুলে ধরে চাষিদের উৎসাহিত করছি।