ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিমাপণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সেবাটির গাইডলাইন চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির অংশীদারত্বে পরিচালিত এ সেবা চালু হলে উভয় খাতই লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী মে মাসেই গাইডলাইনসহ ব্যাংকাস্যুরেন্স চালুর প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত বছর ব্যাংকাস্যুরেন্স গাইডলাইন ফর ব্যাংকস চূড়ান্ত করে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সেই নির্দেশিকা ইংরেজি ভাষায় হওয়ায় বাংলায় প্রণয়ণের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কর্পোরেট এজেন্ট বা ব্যাংকাস্যুরেন্স গাইডলাইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি মিললেই দেশে ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করতে খুব বেশি দেরি হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এ ব্যাপারে আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স গাইডলাইন এখন শুধু মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মে মাসেই এটি চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে আশা করছি। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করতে কালক্ষেপণ হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান।

নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যাংক বিমাকারীর কর্পোরেট এজেন্ট হিসাবে কাজ করবে। ব্যাংকাস্যুরেন্স পদ্ধতি চালুর জন্য ব্যাংকের নিজস্ব কোড অব কনডাক্ট থাকতে হবে। ব্যাংক কর্পোরেট এজেন্টের লাইসেন্স চাইলে ব্যাংক ও বিমাকারীর মধ্যকার খসড়া চুক্তিপত্র; ব্যাংকাস্যুরেন্স চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পত্র; পে-অর্ডার বা একাউন্ট পেয়ি চেক দাখিল করতে হবে। বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ব্যাংককে তিন বছরের জন্য কর্পোরেট এজেন্টের লাইসেন্স প্রদান করবে। কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স ফি বাবদ কর্পোরেট এজেন্টের লাইসেন্স নবায়নের সময় ব্যাংক ৫০ হাজার টাকা কর্তৃপক্ষের বরাবর জমা দিবে।

খসড়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যাংক বিমাকারীর পক্ষে বিমাকারীর নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করবে। কর্পোরেট এজেন্ট বিমাকারীর পক্ষে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিমাকারীর রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইন রিপোর্ট প্রদান করবে। কোন অবস্থাতেই কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স ) এর প্রাপ্য কমিশন বাবদ আয় প্রিমিয়াম আয়ের সাথে সমন্বয় করা যাবে না। বিমা চুক্তি সম্পাদনের জন্য বিমাগ্রহীতার প্রস্তাবপত্রসমূহ, বিমাকারী কর্তৃক প্রদত্ত বিমাদলিলাদি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুসৃত হবে, কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স ) এর কোন প্রভাব থাকবে না।

খসড়া নির্দেশিকায় বিমা পণ্য বিক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যাংক কর্পোরেট এজেন্ট হিসেবে অ্যাকাউন্টহোল্ডার বা গ্রাহকের নিকট লাইফ এবং নন-লাইফ বিমা কোম্পানির বিমা পরিকল্প বিক্রয়ের জন্য বিপণন চ্যানেলসমূহ যেমন: শাখা, টেলিমার্কেটিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, ওয়েবসাইট, অ্যাপস ইত্যাদির মাধ্যমে বিমা সুবিধার প্রস্তাবনা, বিজ্ঞাপন, বিক্রয়, বিতরণ অথবা বাজারজাতকরণ করতে পারবে; বিমাকারী বিমা পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে, গ্রাহক বিমার প্রস্তাবপত্র পূরণ করিবে এবং প্রিমিয়াম জমার বিপরীতে বিমা গ্রাহককে কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স ) প্রাথমিক রশিদ প্রদান করিবে। যথাযথ অবলিখন প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর বিমা চুক্তিটি বিমাকারী কর্তৃক গৃহীত হইলে চূড়ান্ত রশিদ ও বিমাদলিল বিমা গ্রাহকের অনুকূলে প্রদান করা হবে।

বিমাকারী কর্তৃক বিমা পলিসি গৃহীত না হইলে এবং ইহা কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স )-কে জানানোর তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ প্রদত্ত অর্থ আবশ্যিকভাবে বিমাগ্রহীতাকে বিমাকারী ফেরত প্রদান করবে।

খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকের কোন প্রকার দায় থাকবে না বরং বিমা দাবির সম্পূর্ণ অর্থ বিমাকারী বিমাগ্রহীতার সাথে চুক্তি মোতাবেক প্রদান করবে। খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংক কর্তৃক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিমা পরিকল্প গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না; একটি ব্যাংককে সর্বোচ্চ ৪টি লাইফ ও ৪টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পাদনের নিমিত্তে কর্পোরেট এজেন্ট এর লাইসেন্স প্রদান করা হবে। একটি বিমা কোম্পানি সর্বোচ্চ ৪ টি ব্যাংকের সাথে ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি করতে পারবে।

কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স ) এর কমিশন বিষয়ে খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার অনুসরণ করে নন-লাইফ বিমাপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাংকাস্যুরেন্স কর্পোরেট এজেন্টকে বিমাকারী প্রিমিয়ামের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হারে কমিশন দিবে। জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ২০ বছর বা তদুর্ধ্ব মেয়াদি পরিকল্পের জন্য প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ ব্যাংককে কমিশন দেয়া যাবে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স ) চুক্তির আওতাধীন ব্যাংক তাদের হিসাবধারীদের নিকট ঋণ বা সঞ্চয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমা কোম্পানির পক্ষে পৃথক গোষ্ঠী বিমা চুক্তির আওতায় বিমা পরিকল্প বিক্রয় করতে পারবে (যেমন: ক্রেডিট কার্ড, গৃহ ঋণ, গাড়ি ঋণ বা যে কোন ঋণ কিংবা যে কোন ধরনের সঞ্চয় স্কিম)। এক্ষেত্রে বিমা কোম্পানি কমিশন হিসাবে মোট প্রিমিয়ামের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কর্পোরেট এজেন্টকে (ব্যাংকাস্যুরেন্স ) প্রদান করবে। প্রিমিয়াম কালেকশন ফি, লভ্যাংশ বন্টন বা অন্য কোন নামে কোন প্রকার অর্থ বা কমিশন কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স )-কে প্রদান করা যাবে না। তবে নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ে আরও বেশি সচেতন করা এবং উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে নবায়ন প্রিমিয়াম নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্জনের পর বোনাস প্রদান করা হবে।

দেশে এখন ৭৮টি লাইফ ও নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম পুনঃবিমা কোম্পানি সুইস রে’র মতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিমা নিয়েছিল ০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।