উচ্চ সুদের সাথে সর্বোচ্চ আস্থায় একটা সময় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ছিলো চাহিদার র্শীষে। অধিক মুনাফার আশায় মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু নিয়মনীতির কড়াকড়ি, সাথে সুদের হার কমিয়ে দেওয়া, বিনিয়োগ অঙ্কের জটিলতা- সবমিলিয়ে সঞ্চয়পত্রে ইদানীং ভাটার স্রোত বইছে। এখন নতুন করে বিনিয়োগ তো দূরের কথা, মেয়াদপূর্তির আগেই অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি কমেছে ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। যদিও গত মাসে নিট বিক্রি কমেছিলো ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

প্রতিবেদনের সূত্র অনুযায়ী, শুধু মে মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার। বিপরীতে একই মাসে মূল বিনিয়োগ বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৬ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। তাতে একই সময় নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের মাস এপ্রিলে নিট বিক্রি ছিল ৫৮১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের কোনো স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে আবার সেখানেই বিনিয়োগ করতেন বেশিরভাগ গ্রাহক। তবে এখন যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা আর নতুন করে এখানে বিনিয়োগ করছেন না। আবার অনেকের টাকার অঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় নিয়মের জটিলতায় ফের বিনিয়োগ করতে পারছেন না। ফলে এই খাতে নিয়মিত ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যে কারণে বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ বেশি করতে হচ্ছে।

বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বর্তমানে নিট বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকার এই খাত থেকে ধার নিতে পারছে না।

গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৭৪ হাজার ৭১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৭৭ হাজার ৭৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এগারো মাসে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে ৩ হাজার ২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কোনো ঋণ পায়নি। উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে মূল ও মুনাফাসহ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।

বিপি/আজাদ