ঈদুল আযহা কে ঘিরে কোরবানির পশু কেনা ও বেচায় ব্যস্ত ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। ঈদের রয়েছে আর মাত্র ৩ দিন। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই পশুর হাট গুলো জমে উঠেছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড়ে। কোরবানির পশু লালন পালনের পাশাপাশি বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা।

এ বছর পাবনা জেলায় চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানায় , খামারি ও জেলা পশুসম্পদ দপ্তর ।

জেলা পশুসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাবনা জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪ গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৯৩ হাজার ১০০ টি, ছাগল ৩ লাখ ৬৬ হাজার ২০০টি, মহিষ ৮ হাজার ৩৪ টি ও ভেড়া ৬৬ হাজার ৯১৬ টি রয়েছে। এ জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮২৬টি। চাহিদার চেয়ে ৩ লাখেরও বেশি পশু কোরবানির জন্য রয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

তবে দেশের অন্যতম পশু উৎপাদনকারী এলাকা পাবনায় গোখাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় এবার লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা। তারা বলছেন, গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়ছে কোরবানির হাটে।

এদিকে জেলার কোরবানির পশুর হাটে শুরুর দিকে বেচা-বিক্রি কম থাকলেও শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কেনা বেচা।

খামারি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এক বছর ধরে গোখাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দাম আরও বাড়ছে। ভুসি, কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, চিটাগুড়, ধানের কুড়া, খুদসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। পাবনার সবচেয়ে বড় পশুরহাট করমজা চতুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গরুর সরবরাহ শেষ পর্যায়ে এসে অনেকটাই বেড়েছে এবং দামও কিছুটা চড়া

পাবনা সদর উপজেলার জালালপুর গ্রামের খামারি আমানত শেখ জানান, এবার তার খামারে ৩২টি গরু রয়েছে। এগুলোর ওজন প্রায় ২৫ থেকে ২৮ মণ। এর মধ্যে পাঠান নামের ষাঁড়টি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে শাহিওয়াল ও ব্রাহামাসহ তিনটি জাতের মধ্যে দেশসেরা

হয়েছে। কিন্তু ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। হাটে কমবেশি ক্রেতা সমাগম থাকলেও আশানুরূপ দাম বলছেন না কেউ। যে হারে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে তাতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলার আথাইলশিমুল গ্রামের খামারি রমজান আলী বলেন, কোরবানির হাটকে সামনে রেখে তিনটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি। একেকটির ওজন ১৫ থেকে ২২ মণ। অন্য বছরগুলোয় কোরবানির আগেভাগেই বাড়ির খামারে এসে দরদাম করলেও এবার ব্যাপারীরা খুব কম আসছেন। শুনেছি, এবার গরু পালন (উৎপাদন) হয়েছে অনেক বেশি। তারপরও বেশি দামে গোখাদ্য খাইয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যায্য দাম পাব কি না চিন্তায় আছি।

মৌসুমি পশু ব্যবসায়ীরা চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার জগনাথপুর গ্রামের গ্রামের পশু ব্যাপারী সবুজ হোসেন। তিনি বলেন, এবার তুলনামূলকভাবে গরুর সংখ্যা বেশি। তবে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে গরু পালনের খরচ বেড়েছে। এবার কোরবানির পশু নিয়ে লোকসানের ভয়ে আছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর পাবনার বিভিন্ন হাট থেকে এবং বাড়ি ও খামার থেকে ব্যাপারীরা গরু কিনে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলার কোরবানির হাট গুলোতে নিয়ে বিক্রি করেন। তবে এ বছর বাজার অনিশ্চিত এবং গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লসের শঙ্কা রয়েছে তাই গরু কিনছেন কম।

এদিকে পাবনা জেলার কোরবানির পশুর হাটে প্রথমদিকে বেচা-বিক্রি কম থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে জমে উঠেছে কোরবানির হাটগুলো। তবে ক্রেতা ও মৌসুমী গরু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে তুলনামূলক চড়া দামে গরু বিক্রি হচ্ছে । বিক্রেতারা বলছেন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে অধিক খরচ বেড়েছে। তাই এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। তারপরও গরু পালনের খরচের তুলনায় বিক্রির দাম যথেষ্ট নয়। গরু পালনকারী ও খামারিদের লসের আশঙ্কা রয়েছে।

পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাংগ কুমার তালুকদার জানান, চাহিদার তুলনায় জেলায় এবার দ্বিগুণ কোরবানি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অতিরিক্ত পশুগুলো দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদাও কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে। পশুপালনে এবার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। শুরু থেকেই এবার গোখাদ্যের দাম কিছুটা বেশি। এর ফলে পশু পালনে খামারিদের ব্যয়ও বেড়েছে। সেদিক থেকে ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা লোকসানে পড়বেন ।

এসকে