সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা মোকাবিলায় ব্যাংক খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

শনিবার (২৮ মে) ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেলিম রহমান। এ সময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ফরমান আর চৌধুরী ছাড়াও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

ফজলে কবির বলেন, ২০২০ সালে প্রথমে করোনার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। ওই সময়ে ব্যাংক খাত অসাধারণ কাজ করেছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে কিছু ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ মোট ১৮৯ জন ব্যাংকার মৃত্যুবরণ করেছেন। সে সময় স্বাস্থ্য ও অন্যানদের মতো ব্যাংকাররা ছিলেন সম্মুখ সা‌রিতে।

তিনি বলেন,  বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের নিয়ে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এটা মোকাবিলায় পুরো ব্যাংক খাত একত্রে কাজ করতে হবে। করনোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যেভাবে ব্যাংকাররা অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। বর্তমান সংকটও ব্যাংক খাত ভালো করে মোকাবিলা করতে হবে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সংকট কাটাতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে ব্যাংকগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব পণ্য মূল্যস্ফীতে বেশি ইফেক্ট তৈরি করে (খাদ্য, শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রফতানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত) এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফরেন রিজার্ভ থেকে সরাসরি সাপোর্ট দিচ্ছে। আর যেসব পণ্য মূল্যস্ফীতিতে সরাসরি ইফেক্ট করে না তার জন্য পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন  খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছি।

শিক্ষাবৃত্তি প্রসঙ্গে ফজলে কবির বলেন, করোনাকালে সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) আওতায় বরাদ্দকৃত টাকা স্বাস্থ্য খাতে বেশি ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, তবে শিক্ষা খাতেও ব্যাংকগুলো এগিয়ে এসেছে।

ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানা‌নো হয়, মেধাবীদের মধ্যে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতি বছর নতুন করে ২০০ মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্নাতক পর্যায়ে চার বছরের জন্য এ বৃত্তি দেওয়া হয়। আর নতুন ও পুরোনো মিলে প্রতি বছর আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রমের আওতায় মোট ৮০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রায় ৪ কোটি টাকার বৃত্তি দেওয়া হবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসিক সাড়ে তিন হাজার এবং এককালীন আট হাজার টাকা করে বৃত্তি পাবেন।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেলিম রহমান বলেন, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক নিয়মিত বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড পালন করে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান কর্মসূচি পরিচালিত হয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে তিনি ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।

‌লি‌খিত বক্তব্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ফরমান আর চৌধুরী বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, এ বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে এবং দেশ ও জাতির উন্নতিতে নিজেদের নিয়োজিত করবে।