হঠাৎ দেশের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্পে অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার দেখা দিয়েছে। সিন্ডিকেট করে পোনা উৎপাদনকারী হ্যাঁচারীতে মাদার বা বাগদা চিংড়ির মা সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প।

জানা গেছে, সমুদ্র থেকে মাদার আহরণকারী জাহাজ থেকে গত ১৫ দিন কক্সবাজার ভিত্তিক হ্যাঁচারীগুলোতে মাদার সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় মাদার না পেয়ে পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না কক্সবাজের অধিকাংশ হ্যাঁচারী।

চিংড়ি ব্যবসায়ীদের ধারণা শ্রীম্প হ্যাঁচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর কয়েকজন নেতা কর্তৃক সিন্ডিকেট করার কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এদিকে, কক্সবাজারের অধিকাংশ হ্যাঁচারীগুলোতে বাগদা চিংড়ি পোনার উৎপাদন না হওয়ায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ আশেপাশের এলাকায় পোনা সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পোনার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। এতে করে মৌসুমের শুরুতেই পোনা সংকটের কারণে চাষীরা তাদের ঘেরে পোনা ছাড়তে পারছেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পারলে মোটা অংকের টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষীদের। ব্যাংক লোন নিয়ে যারা চিংড়ি চাষ করেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে।

শ্রীম্প হ্যাঁচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানিয়েছেন, গত ১৫দিন ধরে হ্যাঁচারীতে মাদার সাপ্লাই বন্ধ রয়েছে। যে কারণে অধিকাংশ হ্যাঁচারী পোনা উৎপাদনে যেতে পারছেন না। মাদার সাপ্লাইকারী জাহাজ ব্যবসায়ী, মাদার বহনকারী কার্গো এসোসিয়েশন ও ফিড ব্যবসায়ীর সাথে শ্রীম্প হ্যাঁচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ উর্দ্ধতন কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজসে সিন্ডিকেট করে পুরো ব্যবসাটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।

জানা গেছে, তারা কোটা করে প্রতিটি মাদারে ২০ হাজার টাকা কমিশন নেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে হ্যাঁচারীতে মাদার সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। যে কারণে কক্সবাজার ভিত্তিক ৫৬টি হ্যাঁচারীর মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ২৩টি।

শ্রীম্প হ্যাঁচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর ওই সদস্য আরো জানিয়েছেন, এভাবে ১৫ দিন মাদার বন্ধ থাকার কারণে প্রান্তিক চাষীরা আগামী এক মাস পোনা পাবে না। ফলে বাজারে পোনা সরবরাহ না হলে ঘের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গুটি কয়েক কর্মকর্তার নিজের পকেট ভর্তির জন্য চিংড়ি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি রুজি নষ্ট করার পায়তারা করছে।

সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বাবলা জানান, বাজারে পোনার সংকট হলে দাম বেড়ে যায়। ফলে চাষীদের ঘেরে পোনা ছাড়তে হিমশিম খেতে হয়। এতে চিংড়ির উৎপাদনও কমে যাবে। একই সাথে কমে যাবে রপ্তানি। তিনি বাজারে মানসম্মত পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাদার সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অন্যদিকে, সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘের মালিক খায়রুল মোজাফ্ফর মন্টু বলেন, গত বছর এক হাজার টাকায় পোনা কিনতে হয়েছিল। এমনিতে মড়কের কারণে আমরা চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত। তারপর সিন্ডিকেট করে কিছু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে এভাবে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পেরে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

মৎস্য অধিদপ্তর খুলনার সহকারি পরিচালক রাজকুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৪৯৬ হেক্টর আয়োতনের জমিতে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৯৪০টি চিংড়ি ঘের রয়েছে। প্রতি মৌসুমে এসব ঘেরে মোট পোনার চাহিদা রয়েছে ৩৫১ কোটি। শ্রীম্প হ্যাঁচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ যদি কোটার মাধ্যমে বাজারে পোনা সরবারহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে তাহলে এই অঞ্চলে পোনা সংকটের সৃষ্টি হবে। ফলে ঘের পোনা ছাড়তে না পেরে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মাছের উৎপাদনও কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো চিংড়ি শিল্পের উপর।

এদিকে, শ্রীম্প হ্যাঁচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর মহাসচিব নজিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি গত ১৫ দিন ধরে মাদার সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁচারী গুলোতে মাদার ফুলফিল হয়ে গেছে। এখন স্টক করার জায়গা নেই। যে কারণে জাহাজগুলো মাদার আহরণ না করে সাদা মাছ আহরণে গেছে। এছাড়া মাদারের দামও সামান্য বাড়ানোর কথা বলেছেন। তবে তিনি সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেন।