পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কাপ-পিরিচ প্রার্থী, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আলহাজ কামিল হোসেনের ভোট চাওয়ার সময় স্ত্রী হালিমা আক্তার মুক্তি ও সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিনের ছেলে আরাফাত সিয়াম ও ভাগনে সম্রাট হোসেন পিয়াল নামের দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২৩মে) দুপুর আড়াইটার দিকে সদরের দুবলিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এরপর কাপ-পিরিচের প্রার্থী কামিল হোসেন আতাইকুলা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলো- সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিনের ছেলে আরাফাত হোসেন সিয়াম (২০), তার ভাগনে মো. পিয়াল (১৯), মো. হৃদয় হোসেন (১৯) প্রমুখ। তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাবনা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী সোহেল হাসান শাহীন (মোটরসাইকেল প্রতীক) এর কর্মী ও সমর্থকরা একটি মাইক্রোবাসযোগে এসে অপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী (কাপ-পিরিচ মার্কা) কামিল হোসেনের কর্মী মো: হারুনর রশীদকে সঙ্গবদ্ধ দল বেঁধে হত্যার উদ্দেশ্যে বেধরক মারপিট করে। এসময় কামিল হোসেনের স্ত্রী মোছা: হালিমা খাতুন মুক্তি বিষয়টি দেখে এগিয়ে আসলে তাহাকেও পরিধানের কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করে রাস্তার উপর ফেলে দেয়। এবং অন্যান্য ৭/৮ জন মেয়েদেরকেও বিভিন্ন ধরনের টানাহেঁচড়া, মারপিট ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানী করে। এসময় নির্বাচনী প্রচার কাজের লিফলেট-পোস্টার ও ব্যানার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এবং নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত একটি প্রচার হ্যান্ড মাইক ভাঙচুর করে। এময় প্রধান অভিযুক্ত মো: সিয়াম তার কোমরে থাকা পিস্তল বাহির করে গুলি করার হুমকি দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এলাকায়, সালিশি বাণিজ্য, চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধ পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে।

পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, দুবলিয়া অঞ্চলের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন খানের ছেলে সিয়াম আমাদের কাপ-পিরিচের প্রার্থীর স্ত্রী ও সমর্থকদের উপর যেভাবে হামলা করেছে আমরা খুবই মর্মাহত। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেইসঙ্গে হামলায় অভিযুক্ত দুই সন্ত্রাসীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। যদি তারা ছাত্রলীগের কোন পদে থাকে তাহলে বহিষ্কার করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচনের কাপ-পিরিচের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ কামিল হোসেন বলেন, ঘটনার মুহূর্তে আমি নির্বাচনী কাজে চরতারাপুর ইউনিয়নে যাওয়ার সময় দুবলিয়া বাজারে মানুষের জটলা দেখে দাঁড়াইয়ে দেখতে পাই যে, আমার স্ত্রী হালিমা খাতুন মুক্তি বিব্রত অবস্থায় রাস্তার উপর পড়ে আছে। এবং অন্যান্য মেয়েগুলো কান্নাকাটি করছে। আমি তাৎক্ষণিক আমার স্ত্রী ও হারুনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।

তিনি আরও বলেন, দুবলিয়ার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সিয়াম পরিকল্পিতভাবে যেভাবে আমার স্ত্রী ও সমর্থকদের হামলা করেছে এটা খুবই ন্যাক্কারজনক। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব সন্ত্রাসীদের যদি গ্রেফতার না করে তাহলে দুবলিয়া বাজারসহ পাবনা সদর উপজেলা অচল করে দেওয়ারও হুমকি দেন তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন সিয়ামের বক্তব্য জানতে কল করা হলে ফোন রিসিভ করেননি।
আতাইকুলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রার্থী থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুবলিয়া ফাঁড়ি পুলিশের (ইনচার্জ) আহসান হাবিবকে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচনী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পাবনা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইন প্রয়োগ করা হবে।

আগামী ২৯ মে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন প্রথমবারের মত ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।

এসকে