ঝিনাইদহের শৈলকূপায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে সিজারের সময় ফাতেমা খাতুন নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রসূতির মৃত্যুর পরও তিনি বেঁচে আছেন বলে স্বজনদের জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে গোপনে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে নিলে চিকিৎসক প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়টি জানান।

রবিবার (২ জুন) দুপুরে শৈলকুপার কবিরপুর খন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি জানাজানি হলে সন্ধ্যায় প্রাইভেট হাসাপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিল। অভিযানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বনি আমিন অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এর আগেও অভিযুক্ত কথিত চিকিৎসকের হাতে সিজারের সময় নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। তাকে গত মার্চে চিঠি দিয়ে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, রবিবার সকালে শৈলকুপার মালিথিয়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে শহরের কবিরপুরে খন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারের জন্য ভর্তি করা হয়। দুপুরে সেখানে সিজার করেন কথিত চিকিৎসক কাশমিম সুজন, অ্যানেসথেসিয়া দেন আরেক কথিত চিকিৎসক মুনতাসির। সিজারের পরপরই মারা যান ফাতেমা খাতুন। তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন, নবজাতক সুস্থ রয়েছে।

প্রসূতির মৃত্যুর পরও স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে রোগী বেঁচে আছেন জানিয়ে দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে জানানো হয়, আগেই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

মৃত প্রসূতির স্বামী জাহিদুল ইসলাম জানান, ফাতেমাকে সিজারের নামে হত্যা করা হয়েছে। সিজারের আগে তিনি সুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর পরও কেন কুষ্টিয়া পাঠানো হলো।

অভিযুক্ত কবিরপুর প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মো. রেজা বলেন, ‘আমরা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মীমাংসা করে ফেলেছি, এখন এসব অভিযান কেন?’ হাসপাতালটির মালিক ফজলুর রহমান বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কাশমিম সুজন বলেন, ‘আমি তো আপনাদের ভাই, নিউজ করার দরকার নেই, একটু দেখবেন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আহসানুল মিজান রুমি জানান, ওই ক্লিনিকের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এরই মধ্যে সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি। এ ছাড়া যিনি অপারেশন করেছেন, সেই কাশমিম সুজনকে গত মার্চে চিঠি দিয়ে কোনো ধরনের অপারেশন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না হয়েও বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করছেন, যা সরকারি আদেশের পরিপন্থি। তাই তাকে সকল প্রকার অপারেশন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আহসানুল মিজান বলেন, অপচিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।