কোটা পদ্ধতিতে নারী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জনপদ ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় সীমিত আকারে কোটা রেখে অন্যসব বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করার দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) গাইবান্ধার জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ জোটের আহ্বায়ক সেলিমের সভাপতিত্বে এ আয়োজন করা হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলা সভাপতি পরমানন্দ দাস, সাধারণ সম্পাদক রাহেলা সিদ্দিকা, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক মৈত্রেয় হাসান জৈয়িতা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বৈষম্যমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য, আপাত অর্থে সমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোটা প্রথার প্রচলন করার কথা। অথচ ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থে দেশে কোটা প্রথা নিজেই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। যার বাস্তব উদাহরণ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর আজও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়েছে। অথচ কোটা ব্যবস্থা কোনোক্রমেই স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

তারা বলেন, ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক নির্বাহী আদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান ও ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। সময় এবং আর্থ সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সমগ্র কোটা ব্যবস্থায় ধারাবাহিক সংস্কার করা যেখানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিল, সেখানে এখনও অস্বাভাবিক মাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়েছে। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশে প্রতিটি শাসক দল তার শ্রেণীগত অবস্থানের কারণে নাগরিকের সম অধিকারে বিশ্বাস করে না।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শাসকদের সংকীর্ণ স্বার্থ ও বৈষম্যমূলক নীতির কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সামাজিক সাম্য তৈরির বদলে বৈষম্যের প্রতিরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। অথচ ৫৩ বছর পরও বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা জারি রাখার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মর্মবস্তুকে অস্বীকার করা হয়েছে। একই সাথে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার মধ্য দিয়ে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের প্রকৃত সুফল থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

তারা বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে আসছে। ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে আবারও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা চালু হওয়ায় সারাদেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নেমেছে। ইতিমধ্যে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চলছে। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট একাত্মতা পোষণ করছে। একই সাথে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে সচেতন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তারা আরও বলেন, আমরা সকলেই জানি ফ্যাসিবাদী শাসকরা জনগণকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে। বিক্ষোভ সমাবেশে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিতে আপামর ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারা।

এছাড়াও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অভাবে কোটা প্রথার যুগোপযোগী সংস্কার না হওয়ায় চাকরি প্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বক্তাদের কেউ কেউ সমস্ত কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি করেছেন।

এএন