সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রের বাড়িসহ সিটি করপোরেশনের ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের পাঁচটি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর হয়। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পাঁচটি ওয়ার্ডে। যার মধ্যে দুই ওয়ার্ডের আর্থিক ক্ষতি টাকার অংকে দেড় কোটির বেশি। তবে ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ে হামলা-ভাংচুর কিংবা কোনো ধরণের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। যদিও সংরক্ষিত ওয়ার্ডসহ ১৪টি ওয়ার্ড থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

চসিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় মোট আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে। এ দুইটি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে অর্ধ কোটির কম ক্ষতি হয়েছে তিনটি ওয়ার্ডে। এরমধ্যে ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের ক্ষতি ২৫ লাখ টাকা এবং ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে ক্ষতি হয়েছে ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ২শ টাকা।

এছাড়াও বাকি ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ক্ষতি হয়েছে ১০ লাখ টাকার, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ৫ লাখ, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৫ লাখ টাকার, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে সাড়ে ৩ লাখ, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডে ২ লাখ, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ২ লাখ ১০ হাজার, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ২ লাখ ৩৫ হাজার এবং ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে দেড় লাখ টাকার। এর বাইরে ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ড, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ড, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড, ৩ ও ৭ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা করে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৫ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

তাছাড়াও এক লাখ টাকার কম ক্ষতিক্ষতি হয়েছে ৯টি ওয়ার্ডে। সেগুলো হলো, ২ নম্বর জালালাবাদ, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ২২ নম্বর এনায়েতবাজার, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩৫ নম্বর বক্সির হাট, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, এবং ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড।

তবে অন্যান্য ওয়ার্ডে হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটলেও ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ে হামলা-ভাংচুর কিংবা কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। এরমধ্যে রয়েছে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড, ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ড, ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড এবং ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ১৪ ওয়ার্ডে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে কিনা সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে ৫টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং বাকি ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড, ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ড, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড এবং ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড। আর সংরক্ষিত ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে তথ্য পাওয়া যায়নি ১, ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সচিবালয় বিভাগ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিবদের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাব। চেষ্টা থাকবে দ্রুত সংস্কার করার। কিছু ওয়ার্ডের অবস্থা বেশি বেহাল। সেখানে ভবনের দেয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে নাগরিক সেবা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নগরীর পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রম চালু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। দ্রুতই নাগরিক সেবা পূর্বাবস্থায় ফেরাতে কাজ চলছে।

এসকে