দেশে চীনের সিনফার্ম’র টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) তিন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। চীন উপহার হিসেবে এই ভ্যাকসিনগুলো দিয়েছিল।

মঙ্গলবার (২৫মে) বেলা ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসুচীর উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের এই কর্মসুচি উদ্বোধন করতে পারায় আমি খুবই আনন্দিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদেরকে প্রথম পর্যায়ে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পরবর্তীতে সারাদেশের মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। শুধু মাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২৫৭ জন শিক্ষার্থীকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্ত্রী বলেন, অন্য দেশগুলোতে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয় তখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিতে থাকি। দেশে ভাইরাস শনাক্তের পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করি। প্রথমে ভ্যাকসিনের প্রটোকল, প্রশিক্ষণ শুরু করি। হাসপাতাল গুলোতে ১২ হাজার করোনা বেড তৈরি করি। এখন দেশে পৌনে ৪০০ ল্যাব কাজ করছে, ১০০টির বেশি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করেছি। বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত দেশে ওষুধের অভাব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, দেশে করোনার মধ্যে আরও ২০ হাজার চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। ভারতের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখান থেকে আর ভ্যাকসিন আনা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অন্য দেশগুলো থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে। রাশিয়া, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের সঙ্গেও ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের উপহারের পাঁচ লাখ ভ্যাকসিন পেয়েছি। এই ভ্যাকসিন গুলো আমরা ফ্রন্ট লাইনারদের দেব। বিশেষ করে মেডিকেলের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের (ইন্টার্ন চিকিৎসক) আগে দেওয়া হবে। আসা করি আমরা জুন থেকেই বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন পাবো এবং মানুষকে দেওয়া শুরু করব।

মন্ত্রী বলেন, ২য় বারের এই লকডাইনের পর করোনার ২য় ঢেউও এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ভারতে ব্লাক ফাঙ্গাসের যে সংক্রমিত হচ্ছে, বাংলাদেশে এটি শনাক্ত হয়েছে। এজন্য আগে থেকেই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ইতোমধ্যেই ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে রাখা হয়েছে যাতে তারা এর ওষুধ তৈরি করে রাখে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ১৫ লাখ লোকের ২য় ডোজের ভ্যাকসিন যেই অনিশ্চয়তায় পড়েছে, এই ২য় ডোজ প্রথম ডোজের ৩-৪ মাস পর পর্যন্ত নেওয়া যাবে। এজন্য আমরা আরও দুই মাস দেরি করেও তাদের ২য় ডোজ দিতে পারব। সেই জন্য সরকার সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যে দেশে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আনার চেষ্টা করছি।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের চীনের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নুর, স্বাচিবের মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা ও হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা সালাম সমতার শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম চীনের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। দেশে চীনের প্রথম ভ্যাকসিন নিতে পেরে স্বস্তি ও সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সে। এছাড়া সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতেও অনুরোধ করে সমতা।