পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের দায়িত্ব নিয়েছেন এই খাতের সবচেয়ে কম বয়সী তরুণ মোহাম্মদ কায়সার হামিদ। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ব্যাংক এবং অব্যাকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সেরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ফাইন্যান্স বা সংক্ষেপে বিডি ফাইন্যান্সকে তিনি নিয়ে যেতে চান সাফল্যের শীর্ষে। দৈনিক বাণিজ্য প্রতিদিনকে তিনি শুনিয়েছেন তাঁর পরিকল্পনা, আশা এবং আকাঙ্খার কথা। তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন বাণিজ্য প্রতিদিনের প্রধান প্রতিবেদক গিয়াস উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন স্টাফ রিপোর্টার বীর সাহাবি।

তরুণ হলেও মোহাম্মদ কায়সার হামিদের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের। তিনি ১৫ বছর আগে দেশের অন্যতম এনবিএফআই ডেলটা ব্র্যাকের (ডিবিএইচ) মাধ্যমে আর্থিক খাতে যাত্রা শুরু করেন। একে একে কাজ করেছেন দেশের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি এবং আইপিডিসিতে। কাজ করেছেন এসএমই খাতের শীর্ষ ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংকেও। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে যোগ দেওয়ার আগে দায়িত্ব পালন করেছেন আইপিডিসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে।

গত ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। করোনার মধ্যে সারাদেশে চষে বেরিয়েছেন । তার আশা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সকে প্রথম তিনটির একটি বানানো। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজও শুরু করেছেন তিনি। গুছিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সব জায়গা। তাঁর ইচ্ছা হলো এক ছাতার নিচে পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতের সকল সেবা দিবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। বাকীটা পড়ুন তাঁর জবানীতে–

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

গত তিন চার বছর ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চরম আস্থার সঙ্কটে ভুগছে। বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা চলে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। সেটার মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটা বড় ধরনের গ্যাপ বা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। যেহেতু আমি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করেছি এবং আমার চাকুরি জীবনের অল্প কিছু সময় বাদ দিলে বাকি সময়টা আমি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যে তিনটি শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেখানে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব কোন পণ্য বা বৈচিত্র্যময় কোন পণ্য বা সেবা নেই। এমন কিছু পণ্য নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন, যেখানে ব্যাংকগুলো করে না। সেগুলো করতে হলে আমাদের মানুষের কাছাকাছি যাওয়া প্রয়োজন।

বর্তমান সময়ে আর্থিক খাতের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হলো আস্থার। এই সংকট কাটাতে হলে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো বা কাছাকাছি যাওয়ার বিকল্প নেই। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ একটি ব্যাংক ডিপেন্ডেড বিজনেস মডেল তৈরি করেছিল। ২০১৮-১৯ সালে দেখেছি ব্যাংকগুলো সাপোর্ট উঠিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে। তার মানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দরকার হচ্ছে ব্যাংক ডিপেন্ডেন্সি থেকে বের হয়ে অল্টারনেটিভ সোর্স অফ ফান্ডের জায়গা তৈরি করা। গ্রাহকদের কাছ থেকে ডিপোজিট সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জায়গা তৈরি করা। এই কাজগুলোই আমরা শুরু করেছি।

চলমান করোনা মহামারীর মধ্যে মানুষ বন্ধি। সেখানে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছে। এই সময়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সকে তথ্য প্রযুক্তির আদলে সব কিছু করার কাজ চলছে। আমরা যোগ্যতাসম্পূর্ণ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ চলছে। একই সাথে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সব কিছুতে সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণ বাড়ানোর কাজ চলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য ২০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করছি। এই বন্ড আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনেক প্রয়োজন। আমরা ফরেন ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য কাজ করছি। বাংলাদেশের প্রোক্ষাপটে এগুলো অনেক জরুরি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান জন্য আরও বেশি জরুরি। গত ১০ মাসে আমরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ কমিয়েছি। এক সময় ব্যাংকের উপর আমাদের ৬০ শতাংশ নির্ভরশীলতা ছিলো। আর ৪০ শতাংশ ছিলো নিজস্ব ফান্ড। বর্তমানে এর চিত্র পুরো উল্টো। বর্তমানে ৫০ শতাংশ ব্যাংক ঋণ ও ৫০ শতাংশ নিজস্ব ফান্ড। এর ব্যবধান আরও কমাতে কাজ করছি।