দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পগুলো পাঁচ বছরের ব্যবধানে গড়ে ১০৫ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে মহিলা মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ ১৪৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান (সার্ভিস সেক্টর ) সব চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। যা বিগত ৫ বছরের চাইতে ১৭৪ দশমিক ২শতাংশ বেশি। এছাড়া বেতনভুক্ত চাকরির ক্ষেত্রে সামগ্রীকভাবে ১৩৪ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয়েছে।

এই তথ্য উঠে এসেছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) পরিচালিত এক গবেষণায়।

“কর্মসংস্থান তৈরিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যাবসায়ীদের ভূমিকা” শীর্ষক গবেষণাটি আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ৭৮২ এসএমই উদ্যোক্তাদের উপর  পরিচালিত হয়।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) অনলাইনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর অন্যতম শীর্ষ গবেষক ড. বজলুল হক খন্দকার গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।

ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন দেশের স্বনামধন্য আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি আরিফ খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। এছাড়া  আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং পিআরআই’র শীর্ষ কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা।

উক্ত গবেষণায় নিম্নে বর্ণিত উপাত্ত গুলোর কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয় :

(i) লিঙ্গভেদে কর্মসংস্থান তৈরিতে অবদান (মহিলা ও পুরুষ উদ্যোক্তা);
(ii) ব্যবসায়ের প্রকারভেদে (উৎপাদন, সেবা, বাণিজ্য ও কৃষি ব্যবসা) কর্মসংস্থানের তুলনামূলক বিশ্লেষন;
(iii) চাকরির ধরন (শ্রমিক, দক্ষ কর্মী, বিক্রয়কর্মী, এবং নির্বাহীকর্মী);
(iv) ঋণের পরিমান (১০ লক্ষের নিচে, ১০ -২৫ লক্ষ, ২৫-৫০ লক্ষ, ৫০-৭৫ লক্ষ) এবং
(v) প্রতিষ্ঠানের ভৌগলিক অঞ্চল।

গবেষণায় দেখা যায় পুরুষ উদ্যোক্তাদের চেয়ে মহিলা মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ উল্লেখযোগ্যভাবে (১৪৬.২ %) বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। গবেষণায় আরও দেখা যায় ব্যবসায়ের ধরনের মধ্যে সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যা বিগত ৫ বছরে ১৭৪.২% বেশি । উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান তৈরিও চোখে পরার মতো; যা গত ৫ বছরে ১৩১% বেড়েছে।

চাকরির ধরণের মধ্যে সর্বাধিক বৃদ্ধির হার লক্ষ্য করা যায় বেতনভুক্ত চাকরির ক্ষেত্রে। ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের শুরুর সময় থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সামগ্রীকভাবে ১৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। একটি ইতিবাচক লক্ষণীয় পর্যবেক্ষণ হলো এই যে এসএমই ব্যাবসায়ীরা তাদের পারিবারিক কর্মীদের উপর নির্ভরশীলতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বেতনভুক্ত কর্মসংস্থানের দিকে ঝুকছে।

এই বিশ্লেষনের উপর আরো আলোকপাত করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে, এসএমই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আমরা আশাবাদী যে আইডিএলসি এর মত অনান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এসএমই অর্থায়ন, প্রশিক্ষ্ণ এবং পরামর্শ সেবায় এগিয়ে আসবে।”

এই গবেষণার প্রবর্তয়িতা হিসেবে আইডিএলসি এর সিইও এবং এমডি আরিফ খান বলেন, “ আইডিএলসি তে আমরা এসএমই ব্যবসার অর্থায়নের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন নিয়েও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকি, যার একটি ইতিবাচক ফলাফল আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এই গবেষণাপ্ত্রটি আরো প্রমান করে যে, এসএমই ব্যাবসায় অর্থায়ন শুধুমাত্র লাভজনকই নয়, বরং সামগ্রিক আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটেও এর গুরত্ত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে।“

উল্লেখ্য , আইডিএলসি’র  মোট অর্থায়নের ৪৬ ভাগই আসে এসএমই ব্যবসার অর্থায়ন থেকে।