আর কয়েকদিন পরই বাঙালির সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’- এই প্রতিপাদ্যে জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মুক্তির আনন্দে মিলবে বাঙালি।

এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলায় চলছে উৎসবের আমেজ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। মাটির সরায় তুলির আঁচড়, বাঁশ-পেরেকের ঠুকঠাক শব্দ। কেউ আবার তৈরি করছেন কাগজের বাঘ, পাখি, রানী-রাজা।

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। দুই বছর পর আবারো বৈশাখের সকালে বাদ্যযন্ত্রের তালে নানা ধরনের বাঁশ-কাগজের তৈরি ভাস্কর্য, মুখোশ হাতে বের হবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর এটি সশরীরে অনুষ্ঠিত হয়নি। সে অনুযায়ী মুখোশ তৈরিসহ নানান প্রস্তুতি নিতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এ উপলক্ষে চলছে সপ্তাহব্যাপী আর্টক্যাম্প। যার বিক্রির আয় দিয়ে হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে বের হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। করোনা বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় জনসমাগম সীমিত রাখতে সবার প্রতি অনুরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এবারও ব্যতিক্রম নয়। কথা হয় রং তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত থাকা অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা বিনতে রোকনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বাঘ, সিংহ, হাতি ও পেঁচাসহ নানান কিছু লোকজ ফর্মের মুখোশ রাঙানো হচ্ছে। এবার আমাদের থিম হচ্ছে লোক শিল্প। করোনাকালে যা কিছু আমাদের জীবনকে মলিন করে দিয়েছে সেগুলো মুছে যাক। জীবন হোক নির্মল ও মঙ্গলময়। এবারে পহেলা বৈশাখেই এটা আমাদের চাওয়া। যে মঙ্গল শোভাযাত্রা সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করে, সেই কার্যক্রমের সঙ্গে প্রথমবারের মতো যুক্ত থাকতে পেরে খুবই ভালো অনুভূতি কাজ করছে।

একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী কর্ণিয়া চৌধুরী বলেন, গত দুই বছর ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর নববর্ষে আবারো চারুকলায় আমেজ ফিরে আসায় আমরা ভীষণ আনন্দিত। আমাদের প্রস্তুতিও প্রায় শেষের দিকে। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে স্ট্রাকচারের কাজ চলছে, ওয়াটার কালারের কাজ চলছে, স্বরাচিত্র চলছে, মুখোশের কাজ চলছে। সবকিছু মিলিয়ে বৈশাখ উদযাপনের আগেই আমাদের এখানে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা ও ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। ডুমুরিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং মেট্রোরেলের চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে আনন্দময় পরিবেশে নববর্ষ উদযাপনের জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।