পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে বরিশালে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। অভিজাত শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাত সব দোকানিরাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি চলছে বেচাকেনা। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন আগের তুলনায় এবার পোশাকের দাম আকাশছোঁয়া।

রোববার (২৪ এপ্রিল) রাতে নগরীর বিভিন্ন অভিজাত শপিং মলগুলো ঘুরে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তবে মেয়েরা নগরীর চকবাজার, কাটপট্রি, গীর্জা মহল্লার অভিজাত মার্কেট গুলোতে ভীড় করলেও ছেলেরা ছুটছে ব্রান্ডের শপ গুলোতে। এর মধ্যে ইজি, প্লাস পয়েন্ট, ক্যাটস আই, জেন্টেলম্যান, ভিরগো, বিশ্ব রং, টুয়েলভ, ইয়োলো ফ্যাশন হাউস অন্যতম।

নগরীর ব্রান্ডের শপ ইজি ফ্যাশন হাউসে পাঞ্জাবি কিনতে আসা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, পাঞ্জাবি খুঁজতে খুঁজতে বেশ কয়েকটি ব্রান্ডের শপ ঘুরে ইজিতে এসেছি। তবে অন্য সব শপ গুলোর তুলনায় ইজিতে তুলনামূলক দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও পছন্দ হয়েছে তাই ২৪৯০ টাকায় এখান থেকে নিচ্ছি।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

নগরীর ফাতেমা শপিং সেন্টারের ইনফেনিটিতে বাচ্চার জন্য ঈদের পোশাক কিনতে আসা রাব্বি বলেন, সাড়ে তিন বছরের বাচ্চার জন্য একটি জিন্স প্যান্ট ১ হাজার ৫০ টাকার সাথে ভ্যাট রেখেছে। সাথে একটি টি শার্ট সাড়ে ৬ শ’টাকা রেখেছে। এ ক্রেতা অভিযোগ করে আরও বলেন, বড়দের থেকে বাচ্চাদের পোশাকের দাম আকাশছোঁয়া। আর কোন পোশাক পছন্দ হলে তো কথাই নেই। একটাও দাম কম রাখে না দোকানিরা।

নগরীর চকবাজার স্বদেশী বস্ত্রালয়ে মেয়ের ঈদের ড্রেস কিনতে আসা স্কুল শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগম বলেন, চকের বেশ কয়েকটি দোকান ঘোরা শেষ, এখন স্বদেশী বস্ত্রালয়ে এসে ইন্ডিয়ান শারারা নামের একটি ড্রেস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম একদর ৩ হাজার ৫ শ’টাকা লেখা। অনেক জোরাজুরি করে দুই শ’ টাকা কম দিয়েছি। একই অবস্থা জুতার দোকানগুলোতেও। চকের মধ্যে মেট্রো শু হাউজ, বরিশাল শু হাউজ, ডায়মন্ড শু হাউজ ঘুরে ১৫ শ’ টাকার নিচে কোন জুতা পাইনি। পরে বরিশাল শু হাউজ থেকে ১৮ শ’ পঞ্চাশ টাকায় জুতা কিনেছি।

এদিকে দাম বেশি নেয়ার বিষয়ে আলাপ করলে স্বদেশী বস্ত্রালয়ের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ সাহা বলেন, বর্তমানে বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আমাদের ড্রেসগুলো আগের থেকে বেশি দামে কেনা পড়ছে। তাই বিক্রিও করতে হবে হয় বেশি দামে। ক্রেতারা না বুঝে অভিযোগ করছেন।

তিনি জানান, মেয়েদের থ্রিপিসের পাশাপাশি এবার শাড়ির চাহিদাও বেশি। কাতান, সিল্ক, টাঙ্গাইল সিল্ক, ঢাকাইয়া জামদানি ও তাঁতের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সিল্কের শাড়ি ১৫ হাজার টাকা, ঢাকাইয়া জামদানি ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও তাঁতের শাড়ি ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে বরিশালের অভিজাত শপিং মলগুলোর পাশাপাশি থেমে নেই ফুটপাতের দোকানগুলোও। ফুটপাতেও রীতিমত জমে উঠেছে বেচাকেনা। নগরীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতের দোকানগুলোতে ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের। বরিশালে প্রায় ৭টিরও অধিক স্থানে চলছে ফুটপাতে ঈদের কেনা-বেচা। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমে উঠেছে, বরিশাল প্রধান ডাকঘরের সামনে, জেলা পরিষদের সামনে, বিবি পুকুর পার ও চৌমাথা লেকের পারে।

ফুটপাতে কেনাকাটা করতে আসা সারমিন নামের এক গৃহিণী বলেন, ভেবেছিলাম ঈদের অনেক আগে এসেছি বেশি ভিড় থাকবে না। এসে দেখছি অনেক ভিড়। ফুটপাতের দোকানে পোশাকের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে জিনিস এখানে ২৫০ টাকা, মার্কেটে সেই একই জিনিস ৫০০/৬০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

ছাব্বির নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বড় বড় শপিংমলের থেকে ফুটপাতের দোকান গুলাতে একটু দাম কম। বড় বড় শপিংমল গুলাতে ইদানীং পূর্বের দাম পরিবর্তন করে বেশি দামের ট্যাগ লাগিয়ে অতিরিক্ত লাভ করে। ফুটপাতের দোকানগুলাতে দাম নির্দিষ্ট করা থাকে না তাই দামাদামি করে পছন্দমত জামাকাপড় কেনাকাটা করা যায়। এই জন্য ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করে একটু স্বস্তি পাই। এখন শপিংমল থেকে শপিং গরিবের ভাগ্যে নেই।

জেলা পরিষদের সামনে ফুটপাত মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী আলতাফ বলেন, কাপড় সবই একই। আমাদের লাইট, ফ্যান, পজিশন খরচ নেই, দোকানের কর্মচারীর খরচ নেই, তাই আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি। তিনি দাবী করেন, শপিংমল আর ফুটপাতের কাপড়ের মান একই। আমরা এক জায়গা থেকেই ক্রয় করি। তারা এনে দোকানে তোলে আর আমরা রাস্তায় বসি।

এদিকে শপিং মলগুলোতে অতিরিক্ত দামে পোশাক বিক্রির বিষয়ে বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ শাহ্ শোয়াইব মিয়া বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। তারপরও যদি কোন ক্রেতা নির্দিষ্ট কোন শোরুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে দেখি।