গ্রামবাসীদের কষ্টের অর্থে বানানো বাঁধ কেটে দেয়ায় বিপাকে পড়েছে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের দ্বিপ মাঝিয়ালী চরসহ ছয় গ্রামের মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ কৃষকরা। চলাচলের ব্যবস্থা না করে বাঁধ ভেঙ্গে দেয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধনসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ময়নুল ইসলাম শাহীন ২০২০ সালে গ্রামবাসীদের কষ্টে ঘামে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ কেটে দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছেন। এর ফলে ছয় গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার মানবের জীবনযাপন করছেন।
এলাকাবাসিদের অভিযোগ, চারদিকে করতোয়া নদী বেষ্টিত দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবারই বর্ষায় পানিবন্দী হয়ে থাকেন। বর্ষায় তাদের চলাচলের কোন পথ না থাকায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। গ্রামটির শিক্ষার্থীদের বর্ষায় বিদ্যালয়ে কিংবা কলেজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কৃষকেরা তাদের জমির উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। ফলে পুরো বর্ষা জুড়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অন্যদিকে প্রতিবছর করতোয়ার স্রোতে গ্রামটি ভাঙ্গনে কমছে জমির পরিমাণ। দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে ২০২০ সালে গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ৩ লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিজেদের চলাচলের জন্য ধরধরিয়া খালের উৎপত্তিমুখে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে একটি বাধঁ নির্মাণ করেন। বাঁধ নির্মার্ণের পর বিগত দুই বছর ভালভাবে চলাচল করতে পারলেও সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ময়নুল ইসলাম শাহীন রাতের অন্ধকারে বাধঁটি কেটে দেন। ফলে দ্বিপ মাঝিয়ালী, ধোকরপাটি, পোড়াডাঙ্গা, বগুড়াপাড়া, কান্তখুটা দক্ষিণমল্লিকাদহ গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দীসহ চলাচলের দূর্ভোগে পড়েন।
এদিকে ধরধরিয়া খালের উপর বাধঁ নির্মাণের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা। গত মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের মল্লিকাদহ ধোকরপাটি ও দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দাদের আয়োজনে করতোয়া নদীর পাড়ে দাড়িঁয়ে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মাননবন্ধনে প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় নারী ও পুরুষ অংশ নেয়। স্থানীয়দের দাবি ধরধরিয়া খালের উপর ও ভাঙ্গনের মুখে পড়া করতোয়া নদীর পাড়ে বাধঁ নির্মাণ করা হলে আবারো তাদের চলাচলের সুব্যবস্থা হবে। ধরধরিয়া খালের উপর বাধঁ নির্মাণ করে চলাচলের সুব্যবস্থার জন্য এলাকাবাসি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামণা করেন।
দ্বিপ মাঝিয়ালী গ্রামের রহিমা খাতুন (৬০) জানান, আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছেনা। চলাচলের ব্যবস্থা না করেই তারা বাঁধটি ভেঙ্গে দেয়। আমরা এখন খুব সমস্যায় আছি।
গৃহিণী আঁখি আক্তার বলেন, বাঁধটি দেয়াতে আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের একটু সুবিধা হয়েছিল। এখন তা আবার কেটে দেয়ায় আমরা কঠিন সমস্যায় পড়ে গেছি। আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই দ্বীপের বাসিন্দা জাহির আলম ও খাজা নাজিমউদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা অবহেলিত। ছোট খালটির এক প্রান্তে বাঁধ দিয়ে আমরা রাস্তা করেছিলাম। এখানে বর্ষাকাল ছাড়া পানি থাকে না। সেই রাস্তাটাও কেটে দেয়া হয়েছে। আমি ভ্যান চালাই কিন্তু ভ্যানটি বাড়িতে নিয়ে যেতে পারিনা। আমরা সবাই দিন আনি দিন খাই। খুব কষ্ট করে প্রায় ৩ লাখ টাকা জোগার করে এই বাঁধটি দিয়েছিলাম। এখন বাঁধের দিকে তাকালেই কান্না পায়।
বাবুল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, এখানকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। একজন মানুষের জন্য শত শত মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। পানিবন্দি মানুষদের রক্ষা করা সহ চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান তিনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা জগদিস চন্দ্র অধিকারী ও শাহিন আলম বলেন, আমরা ওই দ্বীপে চাষাবাদ করি। এখন আমাদেরও যাতায়াতে সমস্যা হয়ে গেছে। ক্ষেতের উৎপাদিত ফল ও ফসল বিক্রি করতে পারছি না। আমরা খুব সমস্যায় পড়েছি।
সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শাহীন বাঁধটি কেটে দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁধ দেয়াতে ধরধরিয়ার গতিপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই বাঁধটি কেটে দেয়া হয়েছে। আপনি কেন বাঁধ কেটে দেয়ার দায়িত্ব নিলেন এমন প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত হয়ে বাঁধ কেটে দিয়েছি তো কি হয়েছে জানান।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস বলেন, এ বিষয়ে ওই ভুক্তভোগিরা আমাকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ওখানে বাঁধ দেয়াটা যেমন উচিত নয়। তবে বাঁধ দেয়াতে খুব ক্ষতি হয়েছে এমনটাও না। যারা বাঁধটি কেটেছে তারা আমাদের না জানিয়ে বাঁধটি কেটে দেয়া ঠিক করেননি। সব দিক রক্ষা করে আমরা একটা সমাধানের চেষ্টা করছি। সেই সাথে যারা বাঁধটি কেটেছে তাদের বিষয়েও আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।