দিনাজপুর সদর উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের তহশিলদারের বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম করে তিনি ১৮০টি পুকুর সরকারী ইজারার তালিকায় রাখেননি। ফলে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেসব পুকুর ইজারা বা খাস গ্রহনের জন্য দেয়া হয়েছে সেখানেও মানা হয়নি সরকারী নিয়ম। ইউএনওর নির্দেশের অজুহাতে ওই তহশিলদার এসব কার্যক্রম করলেও কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি প্রশাসন।
বুধবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন দিনাজপুর জেলা সদরের কমলপুর ইউনিয়নের বড়গ্রাম এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আরিফুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ওই ইউনিয়নে প্রায় ২০০টি খাস পুকুর রয়েছে। সরকারী নিয়মে এসব পুকুর প্রতিবছর ইজারা দেয়ার কথা। কিন্তু তহশিলদার সুলতান মাহমুদ অনিয়ম করে এসব পুকুরের তালিকা সরকারীভাবে প্রকাশ করেন না। মাত্র ২০টির মতো পুকুর সরকারীভাবে ইজারা দেয়া হয়েছে। বাকী ১৮০টির মত পুকুর তিনি গোপনে বিভিন্ন জনের কাছে দিয়েছেন, যা থেকে তিনি মাসোহারা আদায় করেন এবং সামান্যকিছু সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করেন। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গত ১৩ অক্টোবর সরকারী নিয়মের তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে শাহাপুকুর নামের এক একর ৩২ শতকের একটি সরকারী পুকুর ইজারা বা খাস গ্রহনে দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় সরকারী নিয়মনীতি মানা হয়নি।
তিনি বলেন, সরকারী নিয়ম হলো যদি কোন সরকারী পুকুর ইজারা না দেয়া হয় তাহলে কেউ যদি আবেদন করেন তাহলে তাকে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। যদি আবেদন একের অধিক হয় তাহলে ডাক দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই হিসেবেই শাহাপুকুরটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই পুকুরটি সরকারী নিয়ম মোতাবেক ১৪২৯ সালের একসনা খাস আদায়ের জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করি। ২৫ সেপ্টেম্বর ইউএনও পুকুরটি একসনা খাস আদায়ের আমার আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তহশিলদারকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন। এরপর তহশিলদার বিষয়টি জবরদখলকারী কামরুজ্জামানকে অবহিত করে তার কাছ থেকেও একটি আবেদন গ্রহণ করেন। আমার আবেদনের কয়েকদিন পর যে ব্যক্তি জবরদখল করেছেন তিনি আবেদন করেছেন। অবৈধভাবে জবরদখলকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তহশিলদার উল্টো আবেদন গ্রহন করে তাকে সহযোগিতা করেন। যা একটি অনিয়ম। পরে তহশিলদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, যেহেতু দুইটি আবেদন পড়েছে তাই এই পুকুরটি উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ডাক দেয়া হবে। এরপরও তহশিলদারের কথা মোতাবেক আমরা পুকুরটি ডাকের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু তহশিলদার বারবার সময়ক্ষেপন করছিলেন। পরে তহশিলদার আমাকে জানান যে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে পুকুরটি কামরুজ্জামানকে দেয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন লিখিতভাবে কাগজ দেখাতে পারেন নাই তিনি। পরে ১৩ অক্টোবর তিনি পুকুরটি কামরুজ্জামানকে দিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, একাধিক আবেদন থাকার পরও সরকারী নিয়ম না মেনেই পক্ষপাতমূলকভাবে একজনকে পুকুর দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়, আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে তহশিলদার এই পুকুরটি অবৈধভাবে আরেকজনকে দিয়েছেন। তহশিলদার বারবার ইউএনওর নির্দেশে পুকুরটি কামরুজ্জামানকে দিয়েছেন বলেছেন। ফলে এর দায় কোনভাবেই ইউএনও এড়াতে পারেন না। যদি তাই না হয়, তাহলে যে অনিয়মটি হয়েছে তার জন্য অবশ্যই ইউএনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই পুকুরটির আদেশ বাতিল করার পাশাপাশি সকল পুকুর সরকারীভাবে লীজের ব্যবস্থা গ্রহন এবং এসব অন্যায়, দুর্ণীতি-অনিয়মের সঠিক তদন্ত করে তহশিলদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্তূজা আল মুঈদ জানান, সরকারী নিয়ম মোতাবেক পুকুর লীজ বা ইজারার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তহশিলদারকে লিখিত দেয়া হয়। আমি নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে পুকুরটি দিতে বলি নাই।
তবে বিষয়টি জানতে বারবার যোগাযোগ (০১৭৩৩৩০১১০৬) করা হলেও তহশিলদার সুলতান মাহমুদ ফোন রিসিভ করেননি। পরিচয় দিয়ে এসএমএস দেয়ার পরেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।