করোনার ধাক্কায় দুমড়ে যাওয়া দেশের শিল্প কারখানাগুলো সময়ের আবর্তনে নিজেদের গোছাতে শুরু করেছে। ফলে উৎপাদনের মাত্রা সম্প্রসারণের তরে খাতটিতে বেড়েছে ঋণের চাহিদা। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত ২০২১ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫৯৬ কোটি ৮২ টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বছরের ব্যবধানে শিল্পখাতে মোট ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, চলতি বছরের আগের তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২.২৪ শতাংশ। জুন শেষে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৪ কোটি ২ লাখ টাকা। এছাড়া বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ঋণ আদায়ের পরিমাণ। তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মোট ঋণ আদায়ের পরিমাণ ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ আদায় হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১২৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৮২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ আদায় বেড়েছে ১৮ হাজার ৪৯০ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর তিন মাসের ব্যবধানে আদায় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে বিতরণ করা শিল্পঋণের মধ্যে ছয় লাখ ৯১ হাজার ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এই অঙ্ক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৭ হাজার ৫৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেশি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বকেয়া ছিল ছয় লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। শিল্প খাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের অঙ্ক ৯৫ হাজার ৯৪৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৮৪ হাজার ৮৩৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

তথ্য মতে, এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতের মেয়াদি ঋণ বিতরণ ৩ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গত ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ১৪ হাজার ৮৩৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এক লাখ ৩১ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ২৮ ও ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মাঝারি শিল্পে ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ কমেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলিয়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে ২০২২ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন সেক্টরের মতো শিল্পখাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হাওয়ায় ঋণ আদায়ও বেড়েছে।

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ বাড়া খারাপ নয়, এতে প্রবৃদ্ধি বাড়ে। সাধারণের আয়ের উৎস সৃষ্টি হয়। তবে, আদায় কতটা হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। আদায় না হলে এ খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিপি/আজাদ