সাতক্ষীরায় বহুল আলোচিত সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে ১৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও ১ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর সাতক্ষীরায় ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্টে সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায়ে ৮ আসামীকে ১৩ বছর করে সাজা দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় আরও ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ১ জন আসামী। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করা হয়।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) আদালতের বিচারক মো. শরিফুল ইসলাম বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফ। তাকে সহযোগীয়তা করেন অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. আব্দুস সামাদ।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এসময় তারা বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আলামত জব্দের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ মামলার সকলেই দোষী। রায়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করে আরও বলেন এই বিচারের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই রায়ের কারণে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অপরাধের সাথে কেউ জড়িত হবেন না বলে প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

অন্যদিকে, মামলায় আসামীপক্ষে ছিলেন এ্যাড. জিএম আবুবকর সিদ্দীক। তিনি আইনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন আসামীদের বিরুদ্ধে ৩, ৪, ৬ ধারা প্রযোজ্য নয়।  আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। মামলায় বাদী সহ ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৫ টি মামলার ১৬ জন আসামীর সবাইকে খালাস এবং একটি মামলায় ২৫ আসামীর মধ্যে ১ জন আসামীকে খালাস দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক, কালেকটরেট চত্ত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্ত্বর, হাসপাতাল মোড় ও বাস টার্মিনালসহ পাঁচটি পয়েন্টে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এছড়াও জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবির) লিফলেট ছড়ানো হয়।

এ ঘটনার পর ওই দিন বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বরে বোমা হামলাকারী শহরের বাঁকাল গ্রামের নাসির উদ্দিন দফাদার গ্রেফতার হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী  ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ আরও অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ শহরের রসুলপুরে জেএমবির ঘাঁটিতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমান বোমার সরঞ্জাম জব্দ করে। গ্রেফতার হওয়া ১৩ আসামিকে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়।

এ সংক্রান্ত ছয়টি মামলার প্রতিটিতে সিআইডি পুলিশ ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ। এ মামলায় আসামীদের মধ্যে রয়েছেন মনিরুজ্জান মুন্না, আনিসুর রহমান খোকন, মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, মো. গিয়াসউদ্দিন, বিল্লাল হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, মসিউজ্জামান ওরফে মুকুল ডাক্তার, শামিম হোসেন গালিব ওরফে সাইফুল্লাহ, আবদুল আহাদ, আশরাফ মাষ্টার, আলমগীর হোসেন ওরফে আশা, মামুনুর রশীদ, ওবায়দুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম হাজারি, মাহবুবুর রহমান লিটন , মো. আসাদুজ্জামান, মমতাজউদ্দিন, নুর আলি মেম্বর, ফখরুদ্দিন গাজি, আবুল খায়ের ও নাইমুদ্দিন।

এদের মধ্যে মধ্যে আবুল খায়েরকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। পলাতক রয়েছে কয়েকজন আসামী। এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর কারাগারেই অবস্থায় মারা যান আসামী নাসিরুদ্দিন দফাদার।