পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পোস্ট অফিস মোড় ডাকবাংলো সংলগ্ন ‘তরঙ্গ ইলেকট্রনিকস’ নামে তিনতলা ভবনের একটি ইলেকট্রনিকের দোকানের মালিক আমজাদ হোসেন পেশায় তিনি একজন সাধারণ ইলেকট্রিশিয়ান।

প্রাতিষ্ঠানিক কোন উচ্চতর ডিগ্রী নেই তার। বুয়েট কিংবা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ছাড়াই আইপিএস তৈরি ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস এর কাজ করেন তিনি। তবে সবাইকে তাক লাগিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন লিফট। যা রীতিমতো ব্যাপক সাঁড়া ফেলে দিয়েছে এলাকায় । পরীক্ষামূলকভাবে দোকানের তিনতলা ভবনে ওঠানামা করতেই মুলত লিফট তৈরি করেছেন তিনি। যা এখন ব্যবহার করা হচ্ছে নিজ দোকানে সিঁড়ির পরিবর্তে লিফট দিয়ে উঠা নামার কাজে । নিজ মেধা ও দক্ষতা দিয়ে তৈরিকৃত এ লিফট বিদ্যুৎ ছাড়াও সয়ংক্রীয়ভাবে চলবে আইপিএস এর মাধ্যমে।

আমজাদ হোসেন (৬২) উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। এদিকে ৬২ বছর বয়সে আমজাদের অভাবনীয় এ উদ্ভাবনে বিশ্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা । যা এখন পুরো পাবনা জেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দ। তৈরিকৃত লিফট দেখতে বা একটু চড়তে অনেকেই তার দোকানে ভিড় করছেন। আমজাদ হোসেন পাবনা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে দুই বছরের ইলেকট্রিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে আইপিএস, চার্জার লাইট, বৈদ্যুতিক মোটর, ব্যাটারির চার্জার, ফ্রিজের ভোল্টেজ স্ট্যাবেলাইজারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রী তৈরি করে আসছেন। একসময় টিভি ও ফ্যান মেরামতের কাজও করেছেন। তিন বছর আগে ঈশ্বরদী পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনে এক শতক জমিতে ইলেকট্রিক সামগ্রী বেচাকেনার জন্য একটি তিনতলা ভবনের দোকান নির্মাণ করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ওঠা-নামার জন্য ভবনের পেছন দিক দিয়ে একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ওঠানামা করতে অসুবিধা হয়। এছাড়া দোকানের মালামাল ওঠানামা করতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এ সমস্যা দূর করতে একটি লিফট তৈরির পরিকল্পনা করেন আমজাদ হোসেন। তবে শুরুতে বিষয়টি এত সহজ ছিল না। প্রায় তিন মাস সময় নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনার পরে লিফট তৈরির জন্য একটি কন্ট্রোল বক্স, এক টন ওজন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গিয়ার বক্স, এক কিলোওয়াটের আইপিএস ও এক হর্স পাওয়ারের মোটর তৈরি করেন। এরপর স্টিলের ওয়্যার, মেটাল স্ট্রাকচার ও কেবিনের জন্য একটি রিপ্লেকা গ্লাস দিয়ে লিফট তৈরির কাজ শুরু করেন। ইলেকট্রিশিয়ান আমজাদ হোসেন। প্রায় তিন মাস প্রচেষ্টার পর দেড় লাখ টাকা ব্যায়ে দোকানের সামনে তিনতলায় ওঠানামার জন্য এ লিফট তৈরি করতে সক্ষম হন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

লিফট দেখতে আসা স্থানীয় কয়েকজন ও এলাকাবাসী জানান , বেশ কিছুদিন যাবত দেখছিলাম এটি তৈরি করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন আমজাদ সাহেব। দোকানের কাজে ব্যবহার করতে নিজ হাতে লিফট বানিয়ে সেটা চালাচ্ছে এটা খুব আশ্চর্য লেগেছে আমাদের কাছে। তাই লিফটি আমারা দেখতে ও একটু চড়তে এসেছি। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যদি বাণিজ্যিকভাবে লিফট তৈরি করার সহযোগিতা করা হয়, এবং প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহযোগিতা করা হয়, আশা করি দেশ ও বিদেশে লিফট নির্মাণ করে সে দেশের সুনাম বয়ে আনবে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

লিফট তৈরির ব্যাপারে আমজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনতলা ভবনের দোকানে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে কষ্ট হয়। সিঁড়িটি দোকানের পেছন দিক দিয়ে হওয়াতে মালামাল ওঠানামা করতেও বিড়ম্বনা দেখা দেয়। তাই কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম সহজ উপায়ে কিভাবে তিনতলায় ওঠানামা করা যায়। পরবর্তীতে লিফট এর কথা ভেবে কাজ শুরু করি। বর্তমানে এ লিফট পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি। এটি নিরাপদ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এখন এটিকে কীভাবে আরও আধুনিক করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আমার উদ্ভাবিত এ লিফট তৈরির বিষয়টি সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জানাবো। পাশাপাশি ইলেকট্রিক প্রকৌশলীদের পরামর্শ নেবো। স্বল্প খরচে নির্মিত এ লিফট যদি তিন ও চারতলা ভবনে ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার অনুমতি সরকার আমাকে দেয় তাহলে আমি এটি তৈরি করবো।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, আমজাদ হোসেন দেশীয় প্রযুক্তিতে লিফট তৈরি করেছেন। এটি খুব ভালো উদ্যোগ। তার এ উদ্ভাবন কিভাবে বাণিজ্যিক ভাবে করা যায় এবং আরো উন্নত করা যায় তা নিয়ে সরকারী উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবো।