গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে গাজীপুরের কাপাসিয়া শীতলক্ষ্যা নদীর আকস্মিক ভাঙ্গনে নদীর তীরবর্তী একটি আধা পাকা ঘরসহ পাঁচটি ঘর দেবে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে আছে একটি মাদরাসা ও ঈদগাহ মাঠসহ অর্ধশত ঘরবাড়ি। আকস্মিক নদী ভাঙ্গনে আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। খবর পেয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কাপাসিয়ার ফকির মজনু শাহ সেতু (ঈদগাহ মাঠ এলাকা) সংলগ্ন স্থানে ঘর বাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা হেনা বেগম, মাসুদ মিয়া, রফিকুল ইসলাম, বাবুল মিয়া, আক্কাস আলী এবং কিরণ মিয়া জানান, তাদের ঘর বাড়ী দেবে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে। অন্যত্র ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও জায়গার অভাবে তারা সরাতে পারছেন না। খোলা আকাশের নিজে ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিন পপার করতে হচ্ছে ওইসব পরিবারের সদস্যদের।

ভাঙ্গনের শিকার বাবুল মিয়া বলেন, অব্যাহত ভারী বর্ষণে এভাবে ঘর বিলীন হবে, ভাবতে পারিনি। আমার একটি ঘরই ছিল তাও নদীতে দেবে গেছে। এখন থাকারও জায়গা নেই। এ অল্প জায়গায় প্রায় ৫০ বছরের বসতি তাঁদের। এখন শেষ সম্বলটুকুও হারাতে বসেছেন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

হেনা বেগম বলেন, ভারী বর্ষণের পর হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তেই চোখের সামনে নদীর পাড়ের মাটি ভেঙ্গে পড়তে থাকে। সাথে সাথে আমাদের ঘরের বেড়া ভেঙ্গে যায়। ঘরের সব আসবাবপত্রও বের করতে পারেননি। বৃষ্টি থামলে বেড়া সরানোর চেষ্টা করলে মাটি দেবে গিয়ে ঘর ভেঙ্গে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুইদিন যাবত হঠাৎ ভারী বর্ষণ শুরু হলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। মুহূর্তেই পাঁচটি বসতঘর নদীগর্ভে দেবে যায়। এতে ওই পাঁচটি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। ওইসব পরিবারের পাঁচটি সাবমার্সিবল টিউবওয়েলও নদীতে দেবে গেছে। সুপেয় পানি পান করতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর দেবে গিয়ে নদীতে পড়বে।

নদী পাড়ের বাসিন্দাদের চোখে-মুখে হতাশা ও আতঙ্ক দেখা গেছে। ভাঙন রোধ না করলে তারা বাড়িঘর নিয়ে কোথায় যাবেন। ভারী বর্ষণ এবং নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের গতি বাড়তে থাকায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে কখন আবার মাটি দেবে গিয়ে অন্যান্যদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে কাপাসিয়া ঈদ গাহ মাঠ ও মাদরাসার একটি আধা পাকা ভবন।

কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, আগামীকাল সকালে আমি ঘটনাস্থলে যাব। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতাসহ ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, বুধবার (১৯ জুন) আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওখানে বড় একটা গাইড ওয়াল দিতে হবে। সেই গাইড ওয়াল দিতে যে পরিমাণ টাকা লাগবে তা উপজেলা পরিষদ থেকে দেওয়ার সুযোগ নাই। গাজীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব উনি একটি টিম পাঠাবে ঘটনাস্থলে। উনাদের মাধ্যমে আমরা ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসকে