মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে আসন্ন কোরবানি ঈদেও সর্বসাধারণের মাঝে নতুন ও খুচরা টাকা বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকছে না। তবে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনায় এবার নতুন-পুরনো মিলে পর্যাপ্ত টাকা বাজারে ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ছোট-বড় মূল্যমান মিলে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ছাড়ার সমার্থ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

ঈদ সালামিতে নতুন টাকা পেতে পছন্দ করে ছোট-বড় সবাই। এর পাশাপাশি বকশিশ, ফিতরা কিংবা দান-খয়রাতেও অনেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করে। আবার ঈদের আগের মাসের বেতন ও বোনাসের টাকা নতুন নোটে পাওয়ার আশা করেন চাকরিজীবীরা। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে বাড়তি কেনাকাটায় বাজারে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই প্রতিবছর দুই ঈদে নতুন টাকা বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে করোনার কারণে চলতি বছরের রোজার ঈদ ও গত বছরের রোজা ও কোরবানির ঈদেও সর্বসাধারণের মাঝে নতুন টাকা বিনিময় বন্ধ রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো আছে। এবার নতুন-পুরনো পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। ঈদের আগেই তফসিলি ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ছাড়া হবে।’বিশেষ ব্যবস্থায় এবার নতুন টাকা জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তে যাব না। বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাই না। তাই যা হবে ব্যাংকের মাধ্যমেই করা হবে।’

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র একেএম মহিউদ্দিন আজাদ বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ নতুন টাকা রেখেছি। করোনার কারণে জনসাধারণের মাঝে নতুন ও খুচরা টাকা বিনিময়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব ব্যাংক চেকের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী নতুন টাকা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত বছরে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে। প্রতি বছরে দশ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আলোকে এই কোরবানি ঈদে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ার পরিকল্পা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি দিয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য শাখাগুলো নতুন টাকা বিতরণ করছে তার মোট হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। ঈদের আগে এখনও তিনদিন ব্যাংক খোলা থাকবে। আশা করছি ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাবে। তবে সরকারি দুই/পাঁচ টাকার নোট কিছুটা কমতি থাকলেও দশ থেকে একহাজার টাকার নোটের কমতি নেই।

জানা গেছে, সারা বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বিভিন্ন মূল্যমানের নোট প্রয়োজন হয়। এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রয়োজন হয় দুই ঈদে। তবে এবার করোনার সংকটের কারণে এবার নগদ টাকার চাহিদা বেশি হচ্ছে। ঈদের আগে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন টাকা বাজারে এলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, সে রকম কোনো চাপ পড়বে না।

এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাজারে আসছে নতুন মুদ্রিত ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এই নোটগুলো ইস্যু করা হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের নতুন নোটে সিনিয়র অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে নতুন মুদ্রিত নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা চালু থাকবে। এসব নোটের রঙ, পরিমাপ, জলছাপ, ডিজাইন ও অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বর্তমানে প্রচলিত নোটের মতই থাকবে।