গণপরিবহনে নির্বিঘ্ন যাতায়াত ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক ‘স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম’ উদ্ভাবন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

‘গো বাংলাদেশ (GO BANGLADESH)’ নামক এই এপ্লিকেশনটির টিম মেম্বার হিসেবে ছিলেন সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জুলফিকার মাহমুদ, সাবেক শিক্ষক জাহিদুর রহমান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান সৌরভ, জাহাঙ্গীর হোসাইন, রেজাউল করিম ও নিশাত মাহমুদ।

প্রকল্পটি মোবাইল এপ্লিকেশন ভিত্তিক একটি আধুনিক গণপরিহন যা বর্তমান সিস্টেমের বিকল্প, নির্ভুল, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী। কিউআর কোড, ডিজিটাল ওয়ালেট মোবাইল ব্যাংকিং এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে এপ্লিকেশনটির মাধ্যমে আমরা যাত্রী পরিবহন শ্রমিক ও পরিবহন মালিকদের একই ছায়াতলে নিয়ে আসতে সক্ষম।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের জন্য Innovation Design and Entrepreneurship Academy হতে ১০ লাখ টাকার ফান্ড ও পেয়েছে প্রকল্পটি।

স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম নিয়ে জুলফিকার মাহমুদ নিউজবাংলাকে জানান, অনিবন্ধিত বাস ও ড্রাইভার এ সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবে না। বাসের প্রতিটি সিটের পিছনে একটি করে কিউআর কোড লাগানো থাকবে। যাত্রী যে সিটে বসে আছে তার সামনের সিটের পিছনে সে সিটের কোডটি থাকবে। যাত্রীরা তার সামনের কোডটি স্ক্যান করার মাধ্যমে শুধুমাত্র গন্তব্য সিলেক্ট করে ভাড়া দিয়ে দিতে পারবে। ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে টাকা কেটে নিবে। তাছাড়া ভবিষ্যৎ ভ্রমণের জন্য অগ্রিম টিকিটও বুক করে রাখা যাবে।

তিনি আরো বলেন, জার্নির বিপরীতে কোন মন্তব্য বা অভিযোগ থাকলে যাত্রীরা তা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিতে পারবে ও সেবার মান নির্ধারণ করতে পারবে। আর এসব কার্যক্রম সরাসরি পরিবহণ মালিক দেখতে পারবে। কোন যাত্রী ডিজিটালি ভাড়া দিতে না পারলে ক্যাশ টাকার মাধ্যমেও ভাড়া নিতে পারবে। ডিজিটালি দেওয়া ভাড়া সরাসরি মালিকের মার্চেন্ট একাউন্টে যোগ হবে। এছাড়া টাকার মাধ্যমে নেওয়া ভাড়া ড্রাইভার মালিককে দিবে। বাসের সার্বিক পরিস্থিতি মালিক যেকোন সময় দেখতে পারবে।

উদ্ভাবিত প্রজেক্টটি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত মুজিব ১০০ আইডিয়া প্রতিযোগিতা ২০২১ সেরা ১০০ তে স্থান করে নিয়েছে। এছাড়া সিটি ইউনিভার্সিটি আয়োজিত CSE Festival ২০২১ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এরই মধ্যে হিমাচল পরিবহন সিস্টেমটি ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং ‘নগর পরিবহন’ এর সাথে ও চুক্তির আলোচনা চলছে।

এই উপলক্ষে সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে একটি প্রেজেন্টেশনের আয়োজন করা হয়। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ সহ অন্যান্য শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম গবেষণা দলটিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এসময় প্রকল্পটির একটি প্রেজেন্টেশন গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হয়।

অ্যাপটি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে ড. জুলফিকার বলেন, আমরা বাইরের দেশের মতো বাংলাদেশের ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে স্মার্ট করে তুলতে চাই। এ জন্য প্রয়োজনে আমরা এই সিস্টেমটি চালুর প্রথম ছয় মাস বা এক বছর ফ্রিতে দেব। এমনকি সরকার চাইলে আমরা পুরো সিস্টেমটাই তাদের ফ্রিতে দিয়ে দেব।

প্রকল্পটি বাংলাদেশের পরিবহন খাতে ডিজিটাল পরিবর্তন আনতে সক্ষম বলে তারা আশাবাদী।