উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৫ সে:মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, রংপুর অঞ্চলের তিস্তা,ধরলা,দুধকুমার,ব্রক্ষ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বেড়েছে । এর মধ্যে বৃহস্পতিবার তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার ১৩ সেন্টিমিটার ও তিস্তা গাইবান্ধার সুন্দরগন্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । পানি বেড়েছে যাওয়ার কারনে লালমনিরহাট,রংপুর,কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া এসব নদীর ১৮টি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে । ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।

রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির জন্য ইউএনওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পেলেই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এদিকে কুড়িগ্রামের উলিপুরের সাদুয়া দামারহাট এলাকায় তিস্তা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৭ জন। বুধবার (১৯ জুন) রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিখোঁজদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ডুবে যাওয়া নৌকায় ২৬ জন বরযাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ছিলেন ৮ জন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। তার পরিচয় জানা যায়নি।

উলিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, নৌকা ডুবির ঘটনায় একজনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও বাকী ৭জন কে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।

পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়া, বারোঘরিয়া, গোবরধন, সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।পানি বন্দি হয়ে পড়া এসব নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গনসহ নানা ভোগান্তি। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষকের ধান, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। আর বাড়িঘরে পানি থাকায় খাওয়া, ঘুমসহ সকল কাজে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তির।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম(৪৫) বলেন, গত তিনদিন ধরে বাড়িতে পানি থাকায় চুলা জালাতে সমস্যা হচ্ছে। সাইদুলের স্ত্রী বলেন, দিনে একবার রান্না করাই কষ্টকর। এছাড়া গৃহপালিত পশুর খাদ্য জোগানেও বেগ পেতে হচ্ছে। একই এলাকার নদী তীরবর্তী বাসিন্দা সহিদার রহমান(৫৫) বলেন, গত তিনদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার রাত ১১ টার দিকে হঠাৎ পানির চাপ বৃদ্ধি পায়। পানি ভয়ংকর শব্দের রাতের ঘুম হারিয়ে যায়। রাতে তার প্রতিবেশীর বাড়ির একটি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙন ঝুকিতে রয়েছে। জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন এলাকার বাসিন্দা জোবায়ের হোসেন(৪০) বলেন, তিস্তার ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে কতজন এসে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়না। এখন তিস্তায় পানি বাড়লে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে। বাড়ি ঘর, রাস্তায় পানি থাকায় চলাফেলাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।

একই মন্তব্য করেন আদিতমারী উপজেলার বারোঘরিয়া, গোবরধনসহ তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি থাকা পরিবারের লোকজন। তাদের দাবি নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আসায় অল্প পানিতে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ রংপুরের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যারোজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি দ্রুত নেমে যাবে।

এসকে