সংকটের মধ্যেও কিছু দিন ধরে ডলারের দাম স্থিতিশীল ছিল। ব্যাংক ও খোলাবাজারের মধ্যে দরের পার্থক্য কমে আসায় এমনটা তৈরি হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই খোলাবাজারে আবার বেড়েছে ডলারের দাম। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে ১২৩ টাকা থেকে ১২৪ টাকা বিক্রি হয়েছে।

এদিকে কোটা সংস্কার নিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আগেও নগদ ডলার বিক্রি হয়েছে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা থেক ১২০ টাকায়। ব্যাংকগুলোও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছে। এর আগে যা রেমিট্যান্স কেনায় দর ছিল ১১৭ টাকা।

রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে ডলার কিনতে আসা হারুন জানান, থাইল্যান্ড যাব। খরচের জন্য নগদ ডলার কিনতে মানি চেঞ্জারে এসেছি। কিন্ত ডলার ১২৪ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এই রে‌টেই কিনলাম। কারণ শুনলাম দাম আরো বে‌ড়ে যা‌বে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মতিঝিল এলাকার একটি এক্সচেঞ্জের এক কর্মকর্তা বলেন, সোমবার তারা ১২১ টাকা ৫০ থেকে ৭০ পয়সায় ডলার কেনা হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকা থেকে ১২২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। তিনি বলেন, কয়েক দিন অফিস বন্ধের পর ডলারের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে, সে তুলনায় ডলার সরবরাহ কম। বন্ধের আগে ১২১ টাকা কিনে বিক্রি করেন ১২১ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি। একই চিত্র দেখা গেছে দিলকুশা, ফকিরাপুল ও পল্টন এলাকায়।

একই কথা বলছেন পল্টন এলাকার মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা। এলাকাটির এক ব্যবসায়ী জানান, এর আগে ১২১ টাকা থেকে ১২১ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে বেচাবিক্রি হয়েছে। এখন বন্ধের পর আমরাও ডলার সংগ্রহ করতে পারিনি আবার চাহিদাও বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সংকট থাকলে দর বাড়ে। এখন ১২২ টাকা থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে বিক্রি চলছে। তবে দর বেশি চাইলেও ১২২ টাকা ৫০ পয়সাতেই বিক্রি বেশি হচ্ছে। যেখানে কেনা দামও বেড়েছে।

এর আগে গত ৮ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ’র পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে। এর মাধ্যমে প্রতি ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ঘোষণা করা হয় ১১৭ টাকা। ব্যাংক এ দরেরর সাথে বাড়তি এক টাকা কম-বেশি করতে পারবে। ডলারের দর নির্ধারিত ছিল ১১০ টাকা।

এর ফলে খোলাবাজার এবং ব্যাংকের মধ্যে দরের ব্যবধান কমে আসে। অন্যদিকে বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও। এতে ব্যাংকগুলোয় মার্কিন এ মুদ্রাটির দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। আর খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছিল ১২০ টাকায়। যেখানে এর আগে খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়ে আসছিল ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায়।

চলতি বছরের মে এবং জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। ডলারের দর বাড়ানোর পর মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ডলার এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলার। চলতি মাস জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে ভালো রেমিট্যান্স আসে। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর তিন কার্যদিবস সাধারণ ছুটিসহ ৫ দিন ব্যাংক বন্ধের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি চলে আসে।

চলতি মাস জুলাই এর ১৯ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। শুরুর ১৮ দিনের ধারা বজায় থাকলে পুরো মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসত দেশে।

বিএইচ