মহামারির ক্ষত পূরণে ঘুরে দাঁড়ানো রফতানি আয় আবারও হোঁচট খেয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে রফতানি আয় কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে।

অক্টোবরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। চলতি বছরের অক্টোবরে রফতানি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

ইপিবির তথ্য বলছে, একক মাসে রফতানি আয় কমলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সময়ে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা সামান্য বেড়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে সার্বিক পণ্য রফতানি বড়েছে দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে দশমিক ৯৮ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-অক্টোবরে) রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২৭৯ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রথম চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে দশমিক ৩৮ শতাংশ। একই সঙ্গে অর্জিত রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে বেড়েছে দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের বছর একই সময় রফতানি হয়েছিল ১ হাজার ২৭২ কোটি ডলার।

দেশের রফতানির আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে এ খাতের রফতানি কমতে শুরু করে; এপ্রিলে পোশাক রফতানিতে ভয়াবহ ধস নামে। মে মাসেরও তা অব্যাহত থাকে। তবে জুন থেকে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে। এর ধারাবাহিকতা জুলাই,আগস্টের মতো সেপ্টেম্বরেও ব্যাহত ছিল। তবে অক্টোবরে শেষে এ খাতের আয়ে হোঁচট খেয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফ্রান্সে লকডাউন চলছে। এসব কারণে রফতানিতে ফের হোঁচট খেয়েছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলোদেশ আয় করেছে এক হাজার ৪৫ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের আয়ের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৫৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।

মহামারির সঙ্কটের মধ্যেও পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবর চার মাসে ৪৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে কৃষিপণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলার; এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যা ক্ষ্যমাত্রার তুলানায় ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে দশমকি ৩৭ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে এ খাতে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি করে আয় হয়েছে ২৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ১০ দশমকি ৬৩ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় হয়েছিল ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

জুলাই-অক্টোবরে প্লাস্টিক জাত পণ্য রফতানি কমেছে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্লাস্টিক জাত পণ্য রফতানি লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ১৩ শতাংশ।

মহামারির সময়েও চলতি অর্থবছরে ৪ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানির লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম ছিল ২৬ শতাংশ।