করোনার সময় থেকে প্রায় ২ বছর বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছায় কোর্ট চত্বর ও ডিসি চত্বর পরিষ্কার করেন আকলিমা।

গত ২ বছর থেকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্ট চত্বর ও ডিসি অফিস চত্বর প্রতিদিন পরিষ্কার করেন তিনি। বিনিময়ে কখনো পারিশ্রমিক পাননি। শুধু পরিষ্কার করে থেমে নেই তিনি, কোর্ট ভবনের সামনে নিজেই গড়ে তুলেছেন সুন্দর ফুলের বাগান।

আকলিমা বেগম ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার জীবনপুর তোররা এলাকার বাসিন্দা। করোনার সময় স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের মামলা নিয়ে চলে আসেন শহরে। সেই মামলা নিয়ে কোর্ট চত্বরে প্রতিদিনই তাকে আসতে হত। তার পর থেকে আর ফিরে যাওয়া হয়নি আকলিমার। প্রতিদিন সকালে কোর্ট চত্বরে ভিড় শুরু হওয়ার আগেই তিনি
ঝাড়ু– দিয়ে সব পরিষ্কার করেন। এর পরে বাগান পরিচর্যা শুরু করেন। সারাদিন কোর্ট এলাকাতেই থাকেন। বিনা পারিশ্রমিকে আকলিমা একাজ করলেও কয়েকজন উকিল তাঁকে সহযোগিতা করেন। তাঁদের দেওয়া সহযোগিতায় দিন কেটে যায় আকলিমার। আর রাতে শহরের হঠাৎবস্তি এলাকায় একটি ছোট্ট ঘরে গিয়ে ঘুমান তিনি। এভাবেই ২ বছর থেকে কোন সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই দিন কাটে আকলিমার।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

কোর্ট চত্বর পরিষ্কার করার সময় কথা হয় আকলিমার সাথে। তিনি জানান, করোনার সময়ে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের মামলা নিয়ে কোর্টে আসি। মামলার জন্য প্রতিদিনই কোর্টে আসতে হত। তখন দেখতাম কোর্ট এলাকা অনেক নোংরা। সারাদিন কোর্টে বসে থাকতাম।কোর্ট চত্বর নোংরা দেখে আর বসে থাকতে পারলাম না। তাই
নিজেই একদিন ইচ্ছা করে কোর্ট চত্বর পরিষ্কার করা শুরু করলাম।

তিনি আরো বলেন, করোনার সময় সব কিছু পরিষ্কার থাকা খুব জরুরি। আমার যেহেতু হাতে কাজ নেই, তাই আমি কোর্ট চত্বর ও ডিসি অফিসের সামনের জায়গা ঝাড়ু দেই। জায়গা দুটি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। অবশ্য উকিল, মুহুরিদের কাছ থেকে বকশিশ পাই। তা দিয়েই চলে যায় আমার। আর এখানে থেকেই আমার মামলার
খোঁজখবর নেই। মামলা চালানোর জন্য তো টাকা নেই আমার।

কোর্ট এলাকার মুহুরি সাজ্জাদ বলেন, আগে কোর্ট চত্বরে অনেক ময়লােআবর্জনা থাকতো। পরিষ্কার করার জন্য সরকারি কোন লোক নেই এখানে। হঠাৎ একদিন দেখি এই মহিলা সকালবেলা কোর্ট চত্বর পরিষ্কার করছে। তাঁর জন্যই কোর্ট চত্বর পরিষ্কার থাকে।

এ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান রিজভি বলেন, এভাবে স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়া মানুষ খুব কম দেখা যায়। করোনার সময় থেকে উনি যেভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে তার জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা উচিত।