Top
সর্বশেষ

ভুট্টার কান্ড আর নেপিয়ার ঘাস দিয়ে গুড় তৈরী করে ভাইরাল ভুট্ট

৩০ এপ্রিল, ২০২২ ৪:২১ অপরাহ্ণ
ভুট্টার কান্ড আর নেপিয়ার ঘাস দিয়ে গুড় তৈরী করে ভাইরাল ভুট্ট
সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, রংপুর :

পরিত্যক্ত ভুট্টার কান্ড আর নেপিয়ার ঘাস মাড়াই করা রসে গুড় তৈরী করে রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্ট। এখন তাকে সবাই চেনে গুড় ভুট্ট নামে। তার গুড় বানার দৃশ্য ফেসবুকে ভেসে। তার এই তৈরী এই গুড় আখের গুড়েরর চাইতেও সুস্বাদ বলে জানান স্থানীয়রা।

কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্টু পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের ঝাড়বিশলা গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় এক বছর ধরে তিনি বাড়ির পাশের একটি গরুর খামারে কাজ করছেন। খামারের গরুর খাদ্য হিসেবে নেপিয়ার ঘাস ও ভুট্টার গাছ মেশিনে কেটে গরুকে খাওয়ান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করতে গিয়ে এর রস থেকে গুড় তৈরীর চিন্তা তার মাথায় আসে।

এরপর শুরু হয় তার গুড় তৈরীর চিন্তা। ভুট্টার গাছ ও নেপিয়ার ঘাসের পাতা ও কান্ড জড়ো করে রস মাড়াই করেন। সেই রস চুলায় জ্বাল করেন। রসের কষ জমাট বেঁধে তৈরি হয় গুড়। একই ভাবে আরেক দফায় আরো বেশি করে ঘাসের ডাটা ও ভুট্টার গাছ অন্যের আঁখ মেশিনে মাড়াই থেকে রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন। ভুট্টার গাছ থেকে গুড় তৈরি দেখতে গ্রামবাসী তার বাড়িতে ভিড় করেন। সেই গুড় অনেকেই পরিতৃপ্তির ঢেকুর তোলেন।

কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্টু বলেন, আমি এক বছর ধরে গরুর খামারে কাজ করি। সেখানে ভুট্টা-ঘাস কেটে কেটে গরুকে খাওয়াতে হয়। কিন্তু গরু ভুট্টার গাছের কান্ড খায় না। আমি কয়েকদিন ওই ডাটা কেটে কেটে চিবিয়ে দেখেছি। ভুট্টার গাছের রস মিষ্টি লাগত। তখনই ভাবতে থাকি, আঁখ থেকে যদি গুড় হয়, তাহলে ভুট্টা থেকে হবে না কেন। এরপর ভুট্টার গাছসহ নেপিয়ার ঘাস গাছ মাড়াই করে রস থেকে গুড় তৈরি করি।

তিনি বলেন, আমার বাড়ির পাশে আঁখ মাড়াই করা মেশিন আছে। সেখান থেকে মাড়াই করে রস সংগ্রহ করি। এরপর সেটা হাড়িতে জ্বাল দেই। এর পর রস জমাট বেঁধে গুড়ের মতো হয়। আমি সেটা গ্রামের অনেক লোকজনকে খেতে দিয়েছি। সবাই খেয়ে বেশ খুশি হয়েছে। আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। ভুট্টু বলেন, আমার এই গুড় তৈরির বিষয়টি যদি সরকার গুরুত্বসহ দেখে তাহলে ভুট্টা এবং ঘাস থেকেও গুড় তৈরি সম্ভব হবে। আমাকে যদি সহযোগিতা করা হয় তাহলে এই গুড় তৈরি এবং বাজারজাত করার সুযোগ হবে। গুড়ের চাহিদা পূরণে আমি ভূমিকা রাখতে পারব। এজন্য আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।

ভুট্টুর স্ত্রী আদুরী বেগম বলেন, যখন সত্যি সত্যি রস থেকে গুড় তৈরী করা হলো তখন মনটা আনন্দে ভরে গেল। এখন গ্রামের সবাই এসে আমার কাজ থেকে এই গুড় নিয়ে যায়। সরকার আমাদেও সহযোগীতা করলে আমার স্বামী আরো এগিয়ে যেতে পারবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, নতুন এই গুড় মিষ্টি এবং ভিন্ন স্বাদযুক্ত। গ্রামের সবাই এই গুড়ের স্বাদ নিয়েছেন। কারো কোনো সমস্যা হয়নি। অনেকেই ভুট্টুর কাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে নিজেরাও জ্বাল করে গুড় তৈরি করেছেন। যা ইতোমধ্যে গ্রামে বেশ সাড়া ফেলেছে। আর এই গুড় তৈরির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা তৈয়ব আলি জানান, আমি ওই গুড় তৈরি করা দেখে খেয়ে দেখেছি। আঁখ, তাল, খেঁজুরের গুড়ের মতোই ভুট্টার গুড়েও একই স্বাদ পেয়েছি। নতুন এই গুড় অনেকেই খেয়েছেন। কারো কোনো সমস্যা হয়নি।

চৈত্রকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান শাহ জানান, ভুট্টুর এমন উদ্যোগ সবাইকে অবাক করেছে। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি। পরিত্যক্ত ঘাসের ডাটা ও ভুট্টার গাছ থেকে তৈরী গুড় আমার খুব ভালো লেগেছে। সরকারের সহযোগীতা পেলে দেশে গুড়ের চাহিদা পূরণে ভুমিকা রাখবে সে। সেই সাথে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর রংপুরের আঞ্চলিক প্রধান কৃষিবিদ ড.ছাদেকুল ইসলাম বলেন, উদ্যোগটি খুবই ভালো। এটি নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তবে ভুট্টা এবং নেপিয়ার ঘাস যেহেতু ফোডার ক্রপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকে গুড় তৈরি হওয়াতে এটি পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যাপার রয়েছে। ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে মানুষের মানবদেহে বা স্বাস্থ্যের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা আগে সেটা নিশ্চিত হতে হবে। তারপর আমরা বাজারজাত করতে পারি।

শেয়ার