ড্রেনেজ দখল করে মাছের ব্যবসা করে স্থানীয় দুইটি মসজিদ কমিটি। এতে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি। ফলে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাকা ধান, পাট, কলার বাগানসহ কয়েক হাজার বিঘা কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। এচিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের চর গোবিন্দপুর বিলে। এতে কোটি টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকেরা।

এলাকাবাসী ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চর গোবিন্দপুর বিল থেকে স্থানীয় উজ্জলের বাড়ি হয়ে গড়াই নদী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ড্রেনেজ খাল। এই খাল দিয়েই বিলের অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়। খাল খনন করার শর্তে পানি প্রবাহের খাল দখল করে কয়েক বছর ধরে মাছের চাষ ও ব্যবসা করে গোবিন্দপুর ও চর এতনামপুর জামে মসজিদ কমিটি। কিন্তু ব্যবসা চলমান রাখলেও খাল খননে উদ্যোগ নেই মসজিদ কমিটির। ফলে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে বিলটি।

আরো জানা গেছে, পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ায় পাকা ধান, পাট, কলার বাগানসহ কয়েক হাজার বিঘাজমি প্লাবিত হয়েছে। কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্খা করছেন কৃষকেরা।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

শুক্রবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একসময়ে প্রায় ৬০ ফিট প্রস্থের এক কিলোমিটার খাল কৃষকদের দখলে। সংকীর্ণ হয়ে প্রস্থ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৭ ফিট। খালের মধ্যেই ধানের চাষ করা হয়েছিল। খননের অভারে খালের ভিতরে নেই কোন গভীরতা। পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্নের পাকা ধান ও পাট। কোথাও হাটু সমান আবার কোথাও বা মাঝা সমান পানিতে দাঁড়িয়ে ধান কাটছে কৃষকেরা। ধানে পঁচন লেগেছে।

এবিষয়ে চর গোবিন্দপুর বিলের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক টুটুল বলেন, এখানে ৫ বিঘা জমিতে ধান ও এক বিঘা জমিতে পাঠের চাষ রয়েছে। পাকা ধান গুলো এখনও পানিতে ভাসছে। আর পাটের চারা পানিতে ডুবে গেছে। দ্রুত পানি অপসারণ করা না গেলে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে আমার।

তিনি আরো বলেন, ড্রেনেজ খাল দখল করে মসজিদ কমিটি মাছের ব্যবসা করে। কিন্তু খাল খনন করেনা। ফলে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয়ে বিলের সকল ফসল পানিতে প্লাবিত।

স্থানীয় কৃষক আবুল শেখ বলেন, মসজিদ কমিটির কারনে বিলের কয়েক হাজার বিঘা জমিতে পানিতে ডুবেছে। এতে প্রায় কৃষকদের কোটি টাকার ক্ষতি হবে। দ্রুত খালটি খনন করে সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।

ধানচাষী ইসলাম শেখ বলেন, পাকা ধান পানিতে ভাসছে। গাড়িঘোড়া আসতে পারছেনা। তাই কাঁটে পানিতে ভাসিয়ে ডেঙায় নিচ্ছি।

বিলের মাছ চাষী নির্মল হলদার বলেন, দুই লাখ – আড়াই লাখ টাকা দিয়ে লিজের পুকুরে মাছ চাষ করি। কিন্তু পানি জমে পুকুর ভেসে মাছ চলে যায়। এতে প্রতিবছর লোকসানে পড়ি।

বিলে তিনবিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছেন গোবিন্দপুর গ্রামের কৃৃষক হামিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুই মসজিদ কমিটি খালের মাছ বিক্রি করে খায়। কিন্তু বারবার বলার পরেও তাঁরা খাল খনন করিনি। সেজন্য পানি জমে পাকা ধান ডুবে গেছে। ধান কাটতে না পারলে পরিবার নিয়ে কি খাব। চিন্তায় ঘুম আসেনা।

পাটচাষী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানিতে পাটগাছ ডুবে গেছে। দ্রুত পানি না সরালে গাছ মরে যাবে। কৃষকদের অনেক ক্ষতি হবে।

গোবিন্দপুর জামে মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, খালের মাছ বিক্রি দুই মসজিদের উন্নয়ন করা হয়। তবে নিয়মিত খাল খনন করা হয়।

মসজিদ কমিটির সদস্য মো. মোস্তফা বলেন, এতকোন কোন অভিযোগ ছিল না। এবার অভিযোগ উঠেছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের স্বপ্ন পানিতে ভাসছে। খাল খননের জন্য ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। কৃষকদের স্বপ্ন বাঁচাতে এবং খাল খননের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।