এবারের ঈদ যাত্রায় সদরঘাটের চিত্র একেবারে উল্টো। ঈদযাত্রার সেই চিরচেনা রূপ নেই । টিকিট পেতে আগের মতো নেই দৌড়ঝাঁপ-ধাক্কাধাক্কি, ডেকে জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা নেই। এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে লাফ দেয়ার দৃশ্যও চোখে পড়েনি এবার। ফাঁকা যাচ্ছে কেবিন। টিকিট কালোবাজারি এ সবই কিছুই আর চোখে পড়ছে না।

তিতুমীর কলেজের ছাত্র অজিত হাসান বলেন, মূলত পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে লঞ্চঘাটের চিত্র। ফলে ফাঁকা কেবিন আর কম যাত্রী নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে দক্ষিণের লঞ্চগুলো।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বৃহস্পতিবার দেখা যায়, ঈদুল আজহার ছুটিতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। টানাটানি নেই । যাত্রী চাপ নেই। লঞ্চভাড়াও স্বাভাবিক দেখা গেছে। অন্যবার ভাড়া ৫০-১০০ টাকা বেশি রাখলেও এবার ভাড়া আগের মতোই রাখা হচ্ছে। উল্টো ছোট লঞ্চে কেবিনের ভাড়া ১০০-৩০০ টাকা কম নেয়া হচ্ছে। তবে উপেক্ষিত ছিল করোনার বিধিনিষেধ। নির্দেশনা পাত্তা দিচ্ছেন না কেউ।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

ঢাকা থেকে রাত ৮-৯টায় লঞ্চে উঠলে ভোরেই ভোলায় পৌঁছানো যায়। তাই সেতুর প্রভার পড়েনি এ রুটে। ভোলা জেলার সঙ্গে কোনো স্থলপথ সংযোগ না থাকায় এ পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে যাত্রী স্বাভাবিক রয়েছে। এখানে দেখা গেছে ঈদযাত্রার ভিড়। অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য চলছে দৌড়ঝাঁপ।

ঘাটে বরিশাল রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন-১১, পারাবত-১০ ও ১৮, প্রিন্স অব আওলাদ-১০, ভাষানচর রুটের সম্রাট-৭, মুলাদী রুটের মহারাজ-৭ ও অভিযান-৫ রয়েছে। লঞ্চগুলো অনেকটাই খালি ছিল। তবে পটুয়াখালী রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন-১৪, প্রিন্স অব আওলাদ-৭ লঞ্চে ভিড় কিছুটা বেশি।

বরিশালগামী যাত্রী এক যাত্রী বলেন, ‘এ রুটে লঞ্চে যাত্রী থাকবেই। একেবারেও যদি সড়ক পথ উন্নত হয়ে যায় তাও এ অঞ্চলের মানুষ লঞ্চে যাবে। যুগ যুগ ধরে আসা-যাওয়া করা মানুষ এতো সহজে এ পথ ছাড়তে পারবে না। প্রথমবার হয়তো সেতুতে যাচ্ছে। পরে ঠিকই লঞ্চে আসবে। পদ্মা সেতু দেখার জন্য অনেকেই হয়তো সড়ক পথে যাবেন।

পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি এক যাত্রী তিনি বলেন, ‘বিকেলের লঞ্চে একটু চাপ থাকে। তাই সকালে বেরিয়ে পড়েছি। লঞ্চযাত্রা আসলেই আরামদায়ক। আশা করছি এবার স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারব।’

বরিশালগামী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে লঞ্চে ভিড় থাকত। এবার তা নেই। লঞ্চে এবার খুব স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছি। অন্যবার ঈদের সময় টিকিট পাওয়া ছিল খুব কষ্ট। এবার সহজেই টিকিট পেয়েছি। টিকিট কালোবাজারিও নেই।’

ঢাকা-ভোলা রুটে চলাচলকারী লঞ্চের কর্মীরা হ্যান্ডমাইকে যাত্রী ডাকছিলেন। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে যাত্রী অনেক কম। লঞ্চে যাত্রী পূর্ণ করতে সন্ধ্যা লেগে যাবে। আমাদের লঞ্চ ছাড়ার সময় সন্ধ্যা ৭টা।’

লঞ্চের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় নিচতলা ও দোতলার ডেক প্রায় ফাঁকা।

লঞ্চের এক ম্যানেজার বলেন, ‘এবার সদরঘাটে ঈদের আমেজ নেই। আগে ঈদের সময় দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ গন্তব্যে যেত, আসত খালি। এতে পুষিয়ে যেত। ঢাকা নদীবন্দরের ঘাট পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার জীবনে বহু ঈদ দেখেছি। ঈদের আগের দিন গেটগুলো দিয়ে পন্টুনে আসা যাত্রীদের জায়গা দিতে পারতাম না। এবারে ঈদে তেমন কোনো পরিস্থিতি নেই। যাত্রী অনেকটা স্বাভাবিক সময়ের মতো।’

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের যাত্রী কমেছে। ঈদযাত্রার আগের রূপ আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

বিপি/ আইএইচ