একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রতি বছরই যশোরের বেনাপোল চেকপোস্টের নোম্যান্স ল্যান্ডে বসে দুই বাংলার ভাষাপ্রেমী মানুষের মিলন মেলা। বুকে কালো ব্যাচ, মুখে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি …।

নানা রংয়ের ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ডসহ ফুলে-ফুলে ভরে ওঠে নোম্যান্সল্যান্ড। তখন দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ওই স্থানে আবেগাপ্লুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সকল ভেদাভেদ ভুলে যান কিছু সময়ের জন্য। ফুলের মালা দিয়ে উভয় দেশের আবেগ প্রবন অনেক মানুষ বাঙালীর নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।

ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপক্ষা করে দলে দলে যোগ দেন একুশের মিলন মেলায়। ভারত- বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। এ সময় পেট্রাপোল ও বেনাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার বাংলাভাষী মানুষের।ক্ষণিকের জন্য হলেও আন্তর্জাতিক এ সীমান্ত রেখায় ছেদ পড়ে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বেনাপোল নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা সাজে নানান রংয়ের বর্ণিল সাজে। নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় নিমার্ণ করা হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। সকাল থেকে দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এ অস্থায়ী শহীদ বেদীতে। আবেগ আর ভালোবাসায় ভাষা প্রেমীরা ভুলে যায় তাদের সীমান্ত রেখা।

কিন্তু এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে বেনাপোলে বাংলাদেশ – ভারত সীমান্তে এই দৃশ্য আর দেখা যাবে না। এতোদিন দু দেশের সরকারি প্রতিনিধি ও মন্ত্রীরা প্রতিবেশী দেশে গিয়ে শহীদবেদিতে পুস্পস্তবক দিতেন। এবার যৌথভাবে একুশের কোন অনুষ্ঠান নোম্যান্সল্যান্ডে হবে না করোনার কারণে। তবে ওপারে ছোট করে একটি অনুষ্ঠান হবে সেখানে স্থানীয় সাংসদসহ বাংলাদেশের কয়েক জনকে তারা আমন্ত্রণ করেছেন। উভয় দেশের প্রশাসনও রাজি নয় করোনার মধ্যে এ অনুষ্ঠান করতে।

এ ব্যাপারে দুই বাংলার একুশ উদযাপন কমিটির বেনাপোলের আহবায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু বলেন করোনার কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে উভয় দেশের আয়োজকরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে এবার বেনাপোলের নোম্যান্সল্যান্ডে একুশের মিলন মেলা হচ্ছে না। তবে পেট্রাপোলে ছোট একটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে স্থানীয় সাংসদ সহ বাংলাদেশের কয়েকজনকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী বছর থেকে পুনরায় অনুষ্ঠান করা হবে বলেও জানান মঞ্জু।