লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পে হরিলুটের অভিযোগ সাবেক চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু’র বিরুদ্ধে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের করে রাখতেন কোনঠাসা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলতো তার একক রাজত্ব। প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না ইউএনওরা। বরং অনিয়মের সুযোগ না দেওয়ায় তোপের মুখে পড়েন বর্তমান ইউএনও আরিফুর রহমান। চেয়ারম্যানের অনিয়মের সঙ্গী ছিলেন সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের মেঝো ছেলে সালাহ উদ্দিন টিপু লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৩বারের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরআগে দীর্ঘদিন তিনি হত্যায় মামলায় জেল খাটেন। জেল থেকে বের হয়ে আবারও সক্রিয়াভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প গুলো আত্মসাৎ করেন। উপজেলা রাজস্ব থেকে নেয়া উন্নয়ন প্রকল্প, টি আর , কাবিখা, কাবিটা থেকে নেয়া প্রকল্প সহ উপজেলায় লুটপাট করাই ছিল তার প্রধান কাজ। কাজ বাস্তবায়ন করা ছাড়াই বিল নিয়ে যেতেন তিনি। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দীর্ঘ সাত বছর একই স্টেশনে থাকায় তার সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান টিপুর আলাদা সখ্যতা তৈরি হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ইউএনও আরিফুর রহমান সদর উপজেলায় যোগদান করার পর এসব লুটপাট বন্ধ করে দেন। টি আর, কাবিখা সহ সকল কাজ বাস্তবায়ন না করে তিনি কখনো বিল পরিশোধ করতেন না। তখন উপজেলা নির্বাচন সামনে থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান টিপু কিছু না বললেও নির্বাচন পরবর্তী তিনি ইউএনও’র ওপর চওড়া হন। মে মাসের ২৯ তারিখ তৃতীয়বারের মত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত টিপু। নির্বাচিত হওয়ার পর টিপু বলেন, আমি আগের উপজেলা চেয়ারম্যান নই, এতদিন নির্বাচন সামনে থাকায় আপনাকে কিছু বলিনি। এখন আমি যা বলব তাই হবে। তারপর তিনি নির্দেশ দেন প্রকল্প নিতে এবং বলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না, কিন্তু বিল দিয়ে দিতে হবে। ইউএনও তাতে রাজি হয়নি। তিনি ইউএনওর উপর চাপ তৈরি করতে থাকেন। তখন ইউএনও তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন।
কোনভাবেই ইউএনওকে বাগে আনতে না পেরে তখন ষড়যন্ত্র লিপ্ত হন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

একপর্যায়ে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করেন।

আর সেই খাবারের অংশকে রটিয়ে দেন ইউএনওকে বিরুদ্ধে এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের ইন্ধনে ইউএনও’র বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। নিউজ এর সত্যতা না থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যানরা টিপুর ভয়ে এ নিয়ে কোন টু শব্দ করার সাহস পাননি।

এবিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু সম্প্রতি সরকার পতনের আগে অফিসে এসে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়। তিনি প্রকল্প দিবেন। কিন্তু কাজ কি হলো না হলো সেটা যেন আমি না দেখি। সে আরও বলেন আমি এখন আর আগের টিপু নাই। নির্বাচন করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা তুলতে হবে। আমি এতে রাজি না হওয়ায় আমাকে নানাভাবে হেনস্থা ও মিথ্যা অভিযোগে জর্জরিত করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪আগষ্ট ছাত্র-জনতার উপর গুলি করে হত্যা মামলায় বর্তমানে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু আত্নগোপন রয়েছে।

এম জি