চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজারে পাইকারি ও খুচরা দামের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যবধানের কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত সভায়।

শনিবার (৯ এপ্রিল) নগরীর আগ্রাবাদস্থ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় আমন্ত্রিত অতিথি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যের আগে সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনেন। এসময় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান বলেন, গত বছর করোনার সময় হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ধস নামে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো খুললেও তেমন ব্যবসা হচ্ছে না। এখন রমজানে শুধু ইফতার বিক্রি হচ্ছে। সেখানে সরকারি একাধিক এজেন্সি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বড় অঙ্কের জরিমানা করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

আমদানি আদেশ সংশোধন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, সরকার আমদানি করা খাদ্যশস্য দ্রুত খালাসে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসও হচ্ছে। কিন্তু কোনো একটি আমদানির চালান নির্ধারিত সময়ের পর এলে আইপি (আমদানি আদেশ) সংশোধন করে আনতে হয়। তা না হলে সঙ্গনিরোধ কর্তৃপক্ষ প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছে না। আবার আইপি সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করলেও নির্ধারিত সময়ে অনুমোদন মিলছে না। এতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে আমদানি করা খাদ্যশস্য বন্দরে এসে পৌঁছালেও খালাস করতে ৫-৭ দিন দেরি হয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে আমদানিকারককে। যার প্রভাব পড়ছে পণ্যের দামে।

ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামে প্রভাব প্রসঙ্গে আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, বিশ্বের ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য আসে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। সেখানে যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে এর প্রভাব পড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের মূল্য বেড়েছে। সবমিলিয়ে প্রভাব পড়েছে পণ্যের দামে। আমাদের দেশে রোজা শুরু হয়েছে এপ্রিল মাসে। কিন্তু ব্রাজিল-কানাডায় ছোলা উৎপাদন হচ্ছে সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে। আমাদের দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য ওই দেশের ফলন মৌসুমে বুকিং দিতে হচ্ছে, আগেভাগে করতে হচ্ছে আমদানি। এখন দেশে এনে রমজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে মজুত করতে হচ্ছে। কিন্তু মজুত নীতিমালা বাস্তবতার আলোকে হালনাগাদ করা হয়নি। তিনি মজুত নীতিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার দাবি জানান।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রমজানের আগে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর সুফল পৌঁছেনি ভোক্তা পর্যায়ে। কারণ ভ্যাট কমানোর পর মধ্যম পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা তেলের ডিও কিনে নেওয়ার পর পরের দিন হুট করে তেলের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে একেকটি ডিওতে দিতে হয়েছে হাজার হাজার টাকা লোকসান। তিনি রমজানের অন্তত তিনমাস আগে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানান।

সভায় ভোগ্যপণ্যের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, মিলার হতে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখা, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, প্রত্যেক দোকানে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যতালিকা প্রদর্শন, পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রাখা, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ১৩ টন ওজনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেলে শুল্ক সমন্বয় করা এবং আমদানি, মিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিকভাবে লভ্যাংশ নির্ধারণ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়।

সভার অধিকাংশ বক্তা বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করেন। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, আমি সবার বক্তব্য ছয় পৃষ্ঠার নোট নিয়েছি।  বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত না থাকলেও উনার এটাচ টিম (সংযুক্ত দল) এখানে উপস্থিত আছেন। এরপরও আমি উল্লিখিত বক্তব্য নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলব। আলোচনায় যে সব সমস্যা উপস্থাপিত হয়েছে, আমরা সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীতে কোনো অনিয়ম না হওয়ার জন্য মনিটরিং করতে সহায়ক হবে এই অ্যাপটি।

সভায় বক্তব্য রাখেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, চট্টগ্রামের চেম্বারের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, ব্যবসায়ী নেতা অঞ্জন শেখর দাশ, আমদানিকারক ব্যবসায়ী আবুল বশর চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান, মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস ছালাম, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, রিয়াজ উদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছালামত আলী, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ, চেম্বারের পরিচালক রাকিবুর রহমান টুটুল, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার ছাবেরি, আখতারুজ্জামান সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল।

প্রসঙ্গত, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত না থাকার কারণ প্রসঙ্গে মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ওনার শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি।