মা শিখা রানি সাহার বয়স ৭৫। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজতির কারনে অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। অসুস্থ মাকে দেখতে শনিবার সকালে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে গোপালগঞ্জে উদ্দেশ্যে রওনা হন বারডেম হাসপাতালে ওই চিকিৎসক বাসুদবে সাহা। আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলেসহ প্রাণ দিতে হলো এই ডাক্তার দম্পতির। সাথে মারা যান তাদের গাড়ীর চালকও। নিহতরা হলেন, বারডেম হাসপাতালে ওই চিকিৎসক বাসুদবে সাহা, স্ত্রী শিবানী সাহা, ছেলে আহসানাউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিপলী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র স্বপ্নীল সাহা ও প্রাইভেটকার চালক ঢাকার আদাবর থানার দোয়ারী এলাকার আঃ রশিদ মিয়ার ছেলে মোঃ আজিজ মিয়া।

বাড়ী থেকে মাত্র পনের কিলোমিটার দূরে থাকতে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হবার খবর গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসায় পৌঁছানোর পর পুরো এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পেয়ে ওই চিকিৎসকের বন্ধু, আত্নীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার বাড়ীতে ভীড় করেছেন। তবে, এখন পর্যন্ত ডা: বাসুদের সাহার অসুস্থ মাকে ছেলের মৃত্যুর খবর দেয়া হয়নি। তার বাবা সাবেক কমিশনার প্রফুল্ল কুমার সাহা ও স্বজনরা মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছেন। শোকে নির্বাক হয়ে গেছে বাবা প্রফুল্ল কুমার সাহা।

ডা: বাসুদেব সাহার বাবা প্রফুল্ল কুমার সাহা বলেছেন, ওর মা শয্যাশায়ী। অসুস্থ মাকে দেখার জন্য তার ছেলে সকালে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে করে গোপালগঞ্জে আসছিলো। আসার পথেও তার সাথে কথা হয়েছে। তখন সে বলেছেন অল্প সময়ের মধ্যে সে চলে আসবে। এর কিছুক্ষণ পর বাসুদের মেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নী চিকিৎসক শর্মি সাহা আমাকে ফোন দিয়ে জানান ভিডিও কলের মাধ্যমে তার মা বাবার সাথে কথা হচ্ছিলো। কথা বলার মধ্যে একটি বিকট শব্দে ভিডিও কল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে সে আর তার মা বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলো না। এই কথা বলে সে আমাকে খবর নিতে বলেন। এরপর আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নেই। তখন জানতে পারি এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার কথা। পরে ওর মেয়ে শর্মি সাহা গোপালগঞ্জে আসতে বলা হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

ডাঃ বাসুদেব সাহার বাল্যবন্ধু এম বদরুল আলম নাসিম বলেছেন, ডা: বাসুদেব সাহা ছোট বেলা থেকে খুবই মেধাবী ছাত্র ও ক্রীড়াবীদ ছিলো। অনেক ভাল ফুটবলও খেলতো। মানুষ হিসেবে তার মতো ভাল মানুষ পাওয়া যাবে। তার কর্মস্থলে গোপালগঞ্জ থেকে কোন মানুষ গেলেই সে সব কাজ ফেলে তার সাথে কথা বলতেন এবং চিকিৎসাসেবা দিতেন। অনেক আন্তরিক ছিলো সে। তার এ অকাল মৃত্যুতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো আমাদের।

প্রতিবেশি তুষার কান্তি বিশ্বাস বলেন, মহাসড়কের উপর ধান মাড়াই করার কারণে প্রায় দূর্ঘটনা ঘটছে। অকালে ঝরে যাচ্ছে অনেক অমূল্য সম্পদ। আজকের দূর্ঘটনাও সড়কের উপর ধান মাড়াই করার কারণে ঘটেছে। আমরা এ ঘটনার প্রতিকার চায়। যাতে আর কোন জীবন অকালে ঝরে না যায়।

প্রসঙ্গত,  শনিবার সকাল ১১ টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা এলাকায় বাস-প্রাভেটকার ও মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে দুই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে আরো অন্তত ২৫ জন।