২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকায় বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সইয়ের সময় আনোয়ারা চায়না ইকোনমিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। টানেল বাস্তবায়ন হওয়ার পর আনোয়ারা প্রান্তে টানেল সড়কও এখন দৃশ্যমান। তবে একই সাথে চায়না হাররবাং ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)র সাথে যৌথ প্রকল্পটির কাজ থমকে আছে পাঁচ বছর ধরে।

কুরিয়ান এক্সফোর্ট জোন (কেইপিজেড) এর পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদনের মধ্যদিয়ে আনোয়ারায় শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচন হয়। মনে করা হয়েছিল আনোয়ারায় সব চেয়ে বড় শ্রমবাজার হবে চায়না জোন। সূত্র বলছে আনোয়ারাকে বিশেষ একটি অর্থনৈতিক জোন হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে চীনা ইকোনমিক জোন। অর্থনৈতিক জোনের চায়নার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে আনোয়ারা অর্থনেতিক জোনের অবকাঠামো নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪শ’ ২০ কোটি ৩৭লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে এই অর্থনৈতিক জোনের জন্য ২শ’ ৯১ একর খাস জমির লিল সম্পাদন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেখানে ৩শ’ ৭১টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এরমধ্যে ২৫০টিই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। আনোয়ারায় অর্থনৈতিক জোনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থান হবে। তবে করোনার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া চায়নার এই প্রকল্পটি এখনো পর্যন্ত স্তবির হয়ে আছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে চায়না ইকোনমিক জোনের অবকাঠামো উন্নয়নে এখনো সীমানা প্রাচীরও পূর্ণাঙ্গ দেয়া হয়নি। নির্মাণকাজ বন্ধ গত পাঁচ বছর ধরে। কয়েকজন প্রহরী আর চায়না নিযুক্ত কর্মকর্তা ও বেজার কর্মকর্তারা হাজিরায় ছাড়া আর কোন কাজ নাই।

বেজার একটি সূত্র বলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়াারিংয়ের সাথে বেজার জটিলতার কারণে সরকার চূড়ান্ত চুক্তি সই না করায় নির্মাণকাজের বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ । নানা কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের বনিবনা না হওয়ায় নতুন করে ঠিকাদার খুঁজছে সরকার। আর শীঘ্রই নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে চায়না ইকোনমিক জোনের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক একটি সূত্র বলছে স্থানীয় সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সাথে এই প্রকল্পটি নিয়ে চায়নার কূটনৈতিক সম্পর্ক তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। যার ফলে স্তবির হয়ে আছে সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হতে যাওয়া এই প্রকল্পটি।

প্রকল্পের সার্বিক বিষয় নিয়ে সময়ের আলোর সাথে কথা বলেন, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল ইকোনমিক জোনের চায়না হারবাং ইঞ্জিনিয়াারিংয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিনয় বাড়ৈ। তিনি বলেন, কিছু কিছু জটিলতা রয়েছে। যার কারণে ২০১৯ সালের পর থেকে কাজ মোটামুটি বন্ধ অবস্থায় আছে। এখন শুনছি আবার কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে আমরা প্রায় ২শ একর ভূমি উন্নয়ন করেছি। রাস্তা ও সীমানা প্রাচীর দিয়েছি। আনোয়ারার পিএবি প্রধান সড়ক কালাবিবি দীঘি থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত এক কিলোমাটর দৈঘর্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের এবং অপরটি বৈরাগ থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত চারলেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হযেছে। নির্মিত হয়েছে বৈরাগ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর। সমান করা হয়েছে প্রকল্প এলাকার ২শ একর পাহাড়ি টিলা। তাছাড়াও প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা ভূমিও চিহ্নিত করা আছে। জটিলতাগুলোর সমাধান হলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। সরকার কবে নাগাদ কাজের অনুমতি দিবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেজার একটি টিম কিছুদিন আগেও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসেছিল তারা একটা প্রতিবেদন জমা দিবে। ঐ প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করবে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ে প্রকল্পের কাজ পূনরায় শুরু হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে আনোয়ারায় এটি হবে সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।