Top

তিস্তা নদীর পাশে বসবাসরত ২ কোটি মানুষের জীবনে দুর্যোগ

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ৫:৩০ অপরাহ্ণ
তিস্তা নদীর পাশে বসবাসরত ২ কোটি মানুষের জীবনে দুর্যোগ
সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, রংপুর :

তিস্তা অববাহিকার ভারত-বাংলাদেশ মিলে নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারা ও দেশীয় ব্যবস্থাপনায় নদী খনন, ভাঙন রোধে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে না পারায় তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটারে বসবাসরত ২ কোটি মানুষের জীবনে দুর্যোগ নেমে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিস্তাা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

তাদের অভিযোগ, তিস্তা অববাহিকতার রংপুর অঞ্চলে খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনে আহাজারি করছে এই অঞ্চলের মানুষ। নদী ভাঙনে বিভিন্ন ঐরাকায় তিস্তা নদীর প্রস্থ হয়েছে ১০-১২ কিলোমিটারে দাড়িয়েছে। পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠছে তিস্তাপারের জনজীবন। তিস্তা চুক্তি সই এবং নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

সোমবার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এসব অভিযোগ তুলে ধরে তিস্তা চুক্তি সই ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। মানববন্ধনে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা লিডার শফিকুল ইসলাম কানু, ড. তুহিন ওয়াদুদ, সাদেকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলী, বখতিয়ার হোসেন শিশির, কেন্দ্রীয় নেতা সাজু সরকার, মোস্তাফিজার রহমান, আশিকুর রহমান ও বাবুল আকতার প্রমুখ। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলার চোখ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এবছর অসময়ের উজানের ঢলে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় সপ্তমবারের মতো বন্যা হয়েছে। বন্যা ও নদী ভাঙনের ভয়াবহতায় এই অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। গজল ডোবায় বাঁধ দিয়ে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখে ভারত। পানি বেশি হলেই বাংলাদেশকে না জানিয়ে এঅঞ্চলের মানুষদের পানিতে ফাসিয়ে দিচ্ছে। এতে প্রতিবছর ব্যাপক ফসলহানি ঘটছে। হুমকিতে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। নদী ভাঙনে বাড়ছে উদ্বাস্ত মানুষের সংখ্যা, বাড়ছে রংপুর বিভাগে গড় দারিদ্রের হার।

২৩৫ বছর বয়সী তিস্তা নদী আজ অবধি কোনো পরিচর্যাই করা হয়নি। নাব্যতা নেই। নেই গভীরতা। নদী শাসন ও বন্যা রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করেছিল। তিস্তার ডান তীরে নড়বড়ে ওই বাঁধ থাকলেও তিস্তা বা তীর সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও কোন বাঁধ নেই।

এক্ষেত্রে অন্যদেশ থেকে অর্থ গ্রহণে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব র্অথায়নে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তারা বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদী তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা খুব একটা বড় অংক নয়। এজন্য অর্থ সংগ্রহে তিস্তাপাড়ের মানুষ নিজেরাই যথষ্টে।

মানববন্ধনে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন রংপুরে এসে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড ঝুঁলিয়ে শ্লোগান দেন। মানববন্ধনটি রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে জাহাজ কোম্পানী মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

শেয়ার