যশোরের মনিরামপুরে মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে মামুন হাসান (২১) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মনিরামপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে মামুনকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১ থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত প্রায় চার ঘন্টা হাত-পা বেঁধে মারপিট করা হয়। এরপর স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে তাকে ফেলে রাখা হয়। বুধবার সকালে মনিরামপুর থানা থেকে পুলিশ নিয়ে মা ছকিনা বেগম মামুনকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। নিহত মামুন হাসান মনিরামপুর উপজেলার খোজালীপুর গ্রামের মশিয়ার গাজীর ছেলে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

নিহত মামুন হাসান মনিরামপুর আলিয়া মাদরাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার আনিছুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে চুরির উদ্দেশে একই গ্রামের আয়নালদের ঘরে উঠতে যায় মামুন ও আরমান নামে দুই যুবক। তখন তারা মামুনকে ধরে মারপিট করে। রাত তিনটার দিকে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মামুনের হাত-পাঁ বাঁধা। কয়েকজন নারী ও শিশু ছাড়া কাউকে পাইনি।

মেম্বারের দাবি মামুন নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে একাধিকবার বৈদ্যুতিক সেচপাম্প (মোটর), মোবাইল ফোন চুরি করেছে।

মামুনের মা ছকিনা বেগম বলেন, রাত ১১ টার দিকে ভাত খেয়ে বাড়ির পাশের খালা রেহেনা বেগমের দোকানে যায় মামুন। তখন আরমান নামে তার এক বন্ধু মামুনকে ডেকে বাড়ির পাশে হরিহর নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। তাদের দুইজনকে সেখানে দেখে দল পাকিয়ে লোকজন এসে মামুনকে নদীর পানিতে ফেলে মারপিট করে। সেখান থেকে তুলে আয়নালদের বাড়িতে নিয়ে তাকে পেটায়। খবর পেয়ে যেয়ে দেখি আমার ছেলের অবস্থা মরনাপন্ন। তখন ওরা বলে আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেছে। আমি চোরাই ফোন দেখতে চাইলে মেম্বার আমাকে মারতে আসে।

নিহতের মা আরো জানান, আমার ছেলেকে সিরাজ, মামুন, আলমগীর, আয়নাল, আকের, ইউনুস, মুরাদ, ইসরাইল, আকতারুল, মিন্টুসহ অনেকে মেরেছে।

ছকিনা বেগম আরো বলেন, রাত তিনটার দিকে যখন আমার ছেলে মারা যাচ্ছিল তখন ওরা চুরির আপবাদ দিয়ে ওর চুল কেটে দেয়। মনিরাপুর হাসপাতালের বেডে বিকেল তিনটার দিকে আমার ছেলে মারা যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, পূর্বেও মোবাইলফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুনের উপর ক্ষিপ্ত ছিল আয়নালরা। সেই কারণে মঙ্গলবার রাতে মামুনকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে।

কাশিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী বলেন, রাতে আনিছুর মেম্বার আমাকে বিষটি জানায়। মোবাইল চুরি করতে গেলে মামুনকে জনগণ মারপিট করে বলে জেনেছি। মামুন কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির ছিল।তবে আমি কখনো ওর বিরুদ্ধে চুরির সালিশ করিনি।

মনিরামপুর হাসপাতালের চিকিৎক উলফাত আরা বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মামুনকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমরা রোগীকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু স্বজনরা নেননি। পরে বিকেল তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মনিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি মামুনকে মারপিট করা হয়েছে। ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। যারা মেরেছে তারা চুরির বিষয়টি বলছে। ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যন্য আসামীদের আটকের জন্য চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনায় ১২ জনকে আসামী করে নিহতের পিতা মশিয়ার গাজী মনিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে বলেও জানান ওসি।

প্রসঙ্গত সম্প্রতি মনিরামপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে বোরহান কবির নামে এক কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।