‘দুই পুলা নিয়ে এখন মরলেই বাঁচি। এহন জীবনডা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। ভাতার টেহাই দুইজনের ডাক্তর খরচি চলে না। রোজার মইদ্দে আগরাইত, পরবাতে ডাইল ভাত খাইয়ে রোজা রাহি’- কথাগুলো বলছিলেন দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের মা আয়েশা বেগম।

এক সময় অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন ষাটোর্ধ্ব আয়শা বেগম। তবে বয়সের ভারে তিনি এখন অসুস্থ। এছাড়া নানান রোগে-শোকে এবং বার্ধক্যজনিত কারণে অথর্ব হয়ে গেছেন তিনি। তার স্বামী আব্দুস সালাম মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। অভাবের সংসারে নিজের অসুস্থতার পর দুই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) সন্তান যেন তার জন্য ‘মরার ওপর খঁড়ার ঘা’ স্বরূপ।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার স্বামীহারা আয়শা বেগম এখন নিজের দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় অন্যের জমির ভাঙা ঘরে কোনো মতে দিন পার করছেন তিনি। সেখানে একটু বৃষ্টি হলেই দুই প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে মাথায় পলিথিন দিয়ে ঘরের এক কোণে বসে থাকতে হয় আয়শা বেগমকে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আয়শা বেগমের দুই ছেলে আতিকুল (৪৬) এবং আতিউর (৪৩) জন্মের এক বছরের মাথায় পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়। পরে অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় দু’জনই প্রতিবন্ধী হয়ে যান। এখন তাদের চলার একমাত্র বাহন হুইল চেয়ার। এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস এখন প্রতিবন্ধী ভাতা। যেটা দিয়ে কোনো রকমে চলে সংসার। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের ঔষধ এবং সংসার ওই ভাতার টাকায় চলে। যার ফলে এই রমজান মাসে আয়শা বেগমকে রোজা থাকতে হচ্ছে অনেকটা না খেয়েই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতিক এবং আতিউরের চিকিৎসা খরচ বাড়ছে।

প্রতিবেশী রহমত আলী বলেন, এই পরিবারটা অনেক সমস্যার মধ্যে আছে। যার জন্য তাদের জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সমাজের বিত্তবান এবং সরকার এগিয়ে এলে তাদের বেঁচে থাকাটা আরও একটু সহজ হতো।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নাঈম তালুকদার বলেন, অসুস্থ দুই ছেলেকে নিয়ে এই পরিবারটা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। সংসারে উপার্জনের কেউ নেই। যে ভাতা পান, তা দিয়ে চিকিৎসা আর সংসার চালানো অসম্ভব। তাই সরকার যদি তাদের জন্য ভালো কিছু করতেন, তাহলে তাদের চিকিৎসা এবং খাবারের ব্যবস্থা হতো।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারুণ্যের সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন জানান, আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি যে আতিকুল ও আতিউর জন্ম থেকেই পোলিও রোগে আক্রান্ত। সঠিক চিকিৎসার অভাবে তারা এখন অনেক অসুস্থ। তাদের মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে চলতেন। এখন তারা বেশি অসুস্থ। তাদের ঘরে খাবার নেই, তাই সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীবরদী উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল আকন্দ বলেন, তাদের পরিবারের বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি। সম্প্রতি তাদের প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের জন্য আরও কিছু করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করব

এসকে