Top

সিরাজগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

২১ নভেম্বর, ২০২১ ৩:০৩ অপরাহ্ণ
সিরাজগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে করোনার সুরক্ষা সামগ্রী লোপাটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী ও ৬২ জন সিএইচসিপি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন করোনাকালীন সিএইচসিপি ও স্বাস্থ্য সহকারীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সব সুরক্ষা সামগ্রী লোপাট, কর্মচারীদের ভাতার টাকা আত্মসাৎ ও হাসপাতালে ভুয়া করোনা রোগী ভর্তি দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রায় ৬০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি মিটিং না করেই মিটিংয়ের নামে সম্মানী ভাতা ও আপ্যায়নের টাকা উত্তোলন করেছেন। এছাড়া কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে আপ্যায়নের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ১৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং ভ্যাট, অডিটসহ নানা অজুহাতে সব ধরনের প্রশিক্ষণের সম্মানী ভাতা কেটে নিয়েছেন তিনি।

এদিকে চলতি বছরের শুরুতে ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) আওতায় উপজেলার ৬৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে মাল্টি পারপাস হেলথ ভলেন্টিয়ার (এমএইচভি) পদে ৪৫৭ জন নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব পদে নিয়োগের নামে প্রায় ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমএইচভি পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৬ জন বিভিন্ন কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।

কিন্তু প্রকল্প থেকে ৩৬ জনের ৬ মাসের সম্মানী ভাতার ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ টাকা ইতিমধ্যেই উত্তোলন করে নিয়েছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শুধু তাই নয় এ ভাতার টাকা উত্তোলন করতেও জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা হারে কেটে নিয়েছেন তিনি। গত ৬ মাসের ভাতার মোট ৫ লাখ ৫ হাজার ২০০ টাকা কেটে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এমএইচভি পদে দ্বিতীয় ধাপে ৪ মাসের সম্মানী ভাতার টাকার মধ্যে ৩ মাসের টাকা দেয়া হলেও এক মাসের সম্মানী ভাতার টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও উপজেলা হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার ভেঙ্গে বিশাল হলরুমের সমান করে নিজের বিলাস বহুল অফিস রুম তৈরি করেছেন। তিনি হাসপাতাল চত্বরের বেশ কয়েকটি গাছ কেটেও বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন টাকা ছাড়া এমটি (ইপিআই), এএইচআই, সিএইচসিপি, এইচএসহ কোনো পদে পদায়ন ও বদলির ফরোয়ার্ডিংয়ে স্বাক্ষর করেন না। এছাড়াও সর্বস্তরের স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অসদাচারণ এবং বেতন বন্ধের হুমকি দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নৈরাজ্য ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটা খাত থেকেই তিনি টাকা আত্মসাৎ করাসহ পরিবহন বিলের টাকা থেকে ২৫ থেকে ৩০% কেটে নেন। যেখানে আগের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৫% কেটে নিতেন।

শহীদুল ইসলাম নাদু নামে এক কর্মচারী বলেন, প্রমোশনের ফরোয়ার্ডিংয়ের জন্য স্যার তার সহযোগী কয়েকজন নারী কর্মীর মাধ্যমে ১০/২০ হাজার টাকাও নিয়ে থাকেন। এছাড়াও স্যার পরিদর্শনে যাওয়ার সময় ইনচার্জ বা সহকারী পরিদর্শককে না নিয়ে সিএইচসিপি নাজমা এবং আলিফাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান।

উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম রাশিদুল হাসান বলেন, সিএইচসিপি নাজমার সাথে পরামর্শ করে টার্গেট করে স্বাস্থ্য সহকারিদের বিনা কারণেই শোকজ করা হয়। শোকজের জবাব সন্তোষজনক হলেও তাদের বেতন কাটাসহ সার্ভিস বুকে লালকালির মার্ক করে দেন তিনি।

সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, এ অফিসের কর্মচারীদের কথায় কথায় বেতন বন্ধ করা, খারাপ ভাষা ও খারাপ আচরণ করা হয়ে থাকে। প্রমোশনের ফরোয়ার্ডিংয়ের ব্যাপারেও টাকা আদায়সহ টাকা ছাড়া কারও বেতন ছাড় দেন না ডাঃ আনোয়ার হোসেন। সিএইচসিপি আলিফা ও নাজমার মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবায় বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে বলেন, কর্মচারীদের সঙ্গে একটু ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার কারণে তারা অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু সেসব মীমাংসা হয়ে গেছে।

অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্মচারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহিদুল ইসলাম হীরা বলেন, উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেনের সাথে কর্মচারীদের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ইউএইচএফপিও ফোরামের পক্ষ থেকে ৪/৫ জন গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রাথমিকভাবে মীমাংসা করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগের অনুলিপি আমাকেও দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেয়ার