Top
সর্বশেষ

অপারেশনের পর পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই

১১ ডিসেম্বর, ২০২১ ৩:১২ অপরাহ্ণ
অপারেশনের পর পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই
ফরিদপুর প্রতিনিধি :

দেড় বছরেরও বেশি সময় পেটের মধ্যে সার্জিকাল কাঁচি থাকার অসহনীয় যন্ত্রণাভোগের পর এখন মৃত্যু পথযাত্রী মনিরা খাতুন (১৭) নামে এক মেয়ে। এই দীর্ঘ সময় সে শরীর সোজা করে দাড়াতেই পারেনি। গত দু’তিনদিনে তাঁর অবস্থা মুমূর্ষ পর্যায়ে পৌছানোর পর হাসপাতালে এক্সরে করার পর পেটের মধ্যে কাঁচি থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করে মনিরার পেট থেকে কাঁচি বের করার আশ্বাস দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।

মনিরার বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামে। পিতার নাম খাইরুল মিয়া।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাড়পত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, গত বছরের ৩ মার্চ তলপেটে ব্যাথা নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় মনিরা। মেজেনটারিক সিস্ট (Mesenteric Cyst) অপারেশনের জন্য হাসপাতালের ফিমেল সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলো ৯ মার্চ পর্যন্ত। এসময়ে তার অপারেশনটি করা হয়।

জানা গেছে, এই সার্জিক্যাল অপারেশনের পরে মনিরার পেটের ব্যাথা হতে থাকে। এরমধ্যেই অপারেশনের কদিন পর মনিরার বিয়ে দেয়া হয় নগরকান্দার কল্যাণপট্টি গ্রামে। পেটে ব্যাথার কারণে স্বামীর ঘরেও ভালোভাবে থাকতে পারেনি সে। ব্যাথানাশক ওষুধ ও পল্লী চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে চলছিলো শুশ্রূষা। তবে একপর্যায়ে অসুস্থতার কারণে স্বামীর পরিবারের সাথে তার দুরত্ব বাড়তে থাকে। এরমাঝে গর্ভের একটি সন্তানও নষ্ট হয়ে যায়। একমাস আগে তাকে বাপের বাড়ি রেখে আসে তার স্বামী।

গতকাল বৃহস্পতিবার মনিরাকে নিয়ে তার অভিভাবকেরা ডাক্তার দেখাতে যায় মুকসুদপুর উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। সেখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সিটি ল্যাব নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করার পর পেটের মধ্যে এই সার্জিকাল কাঁচি থাকার বিষয়টি পরিস্কার ধরা পড়ে।

নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ বিষয়ে মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন ডাক্তারের সাথে আলাপ করা হলে তারা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, আমাদের সন্দেহ হলে তাকে একটি এক্সরে করতে বলি। পরে এক্সরে রিপোর্ট আসার পর কাঁচি দেখতে পাওয়া যায়। গত ৩ মার্চ ২০২০ সালে একটি অপারেশনের সময় ভুলে তার পেটের ভেতরে এ কাঁচিটি রেখে দেয়া হয়ে থাকতে পারে।

এই চিকিৎসকেরা বলেছেন, মনিরার পেটে দীর্ঘদিন থাকা ওই কাঁচির হাতলে সামান্য মরচে পড়ে গেছে এবং পেটের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে জড়িযে গেছে। দ্রুত অপারেশন করে কাঁচিটি বের করা না হলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

তবে এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মনিরার পরিবারের কেউ। তার ভাই কাইয়ুম মিয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

শহিদুল ইসলাম নামে মনিরার এক আত্মীয় (খালু) জানান, আর্থিক সমস্যার কারণে মনিরার অপারেশন করাতে দেরি হবে। রাত সাড়ে আটটার দিকে ফরিদপুরের নূর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২য় বারের মতো এক্সরে করার পরেও তার পেটে কাঁচি দেখতে পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেফার্ড করা হয়, এ ঘটনায় মনিরার ভাই কাইয়ুম ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ সহযোগিতা নেয়। শুক্রবার রাত ৯ টা দিকে ফরিদপুর কোতয়ালী পুলিশ মনিরাকে (ফমেক)হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন এবং ডাক্তারদের বিষয়টি অবগত করেন।

শেয়ার