Top

মনিরামপুরে ডোঙা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

০৩ আগস্ট, ২০২১ ৩:৩৮ অপরাহ্ণ
মনিরামপুরে ডোঙা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা
যশোর প্রতিনিধি :

বর্ষাকালে বিল, হাওড়, জলাশয় থাকে পানিতে টইটম্বুর। তাই এসব বিল, হাওড়, জলাশয়ে পরিচিত দৃশ্য ছোট ছোট নৌকার (ডোঙা) চলাচল। যে নৌকা মাছের ঘেরে খাবার নেয়া, বিলে মাছধরা, লোক পারাপার সহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ নৌকাগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে বেড়েছে এ নৌকা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা।

সরেজমিনে দেখো গেছে মনিরামপুরের খাল বিলে পানি থই থই করছে। পানি জমে ফেঁপে উঠেছে এই অঞ্চলের মাছের ঘেরগুলো। এ্রই মধ্যে ধুম পড়েছে ডোঙা তৈরির। ডোঙা তৈরিতে অতি পরিচিত যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুমারঘাটা বাজার। এ বাজারে ২২-২৩ টি ডোঙা তৈরির ঘর রয়েছে। যেখানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ৬০ থেকে ৭০ জন শ্রমিক। এই বাজার ছাড়াও উপজেলার কপালিয়া, কালিবাড়ি, নেহালপুর ও কোনাকোলা এলাকায় চলে ডোঙা তৈরির কাজ। এ উপজেলার কপালিয়া গ্রামের কার্তিক মন্ডল ডোঙা তৈরির কাজ করেন ৪০ বছর। প্রথম দিকে বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন তিনি। এরপর ২৭ বছর ধরে কাজ করছেন কুমারঘাটা বাজারে। গত কাল সোমবার (২ আগস্ট) কথা হয় তার সাথে।

এ সময় তিনি বলেন, বংশ পরম্পরায় এ কাজ করে চলেছি। একটা ছেলে আমার তাকেও শেখাইছি। ২০ টাকার মজুরি দিয়ে শুরু করে এখন ৬০০ টাকা মজুরি পাই। সারা বছর কাজ চলে। বসে থাকা লাগে না। খুলনার কয়রা থেকে কুমারঘাটা বাজারে নৌকা বানাতে এসেছেন মুজিবর রহমান। তিনজনে মিলে দিনে একটা ডোঙা তৈরি করি। এক হাজার টাকা থেকে ৮০০ টাকা হাজিরা পাই। ছয় মাস এখানে ডোঙা তৈরি করি। বাকি সময় মংলায় কাজ করি।

কুমারঘাটা বাজারের ডোঙা তৈরির অধিকাংশ শ্রমিক খুলনার কয়রা এলাকা থেকে আসেন। জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস র্পন্ত তারা এখানে কাজ করেন। বাকি ছয় মাস কাজ করেন মংলা এলাকায়। আর স্থানীয় শ্রমিকরা এখানে কাজ করেন সারা বছর। শ্রমিকদের অধিকাংশ বংশ পরম্পরায় একাজে জড়িত। মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সহ সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বটিয়াঘাটা, কেশবপুর,ডুমুরিয়া, অভয়নগর, নড়াইল এলাকায় যায় এসব ডোঙা। ক্রেতারা ৬-১২ হাজার টাকায় কেনেন এগুলো বলেও জানান মুজিবর রহমান।

কুমারঘাটা বাজারে শ্রমিক খাটিয়ে প্রথমে ডোঙা তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় মোস্তাক আহমেদ মোল্লা। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে এ ডোঙা তৈরির পেশায় জড়িত আছি। পেরেক এবং মেহগনি, পুইয়ে,লম্বু ও খই কাটে তৈরি হয় ডোঙা। তিন জন শ্রমিক দিনে একটি করে ডোঙা তৈরি করতে পারে। কাজ শেষে বৈদ্যুতিক মেশিনে ফিনিশিং দিয়ে রোদে শুকিয়ে কালো রং করা হয় ডোঙায়।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে তিনি দুই জন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেন। এখন তার ৬ টা ঘরে ১৮ জন শ্রমিক কাজ করে। বাজারে তিনি সহ ছয়জন মালিকের ২২ থেকে ২৩টি ঘরে এখন এই ডোঙা তৈরির কাজ চলে। ডোবা এলাকায় ফসল তেমন হয়না। সারা বছর খাল বিলে পানি থাকে। ফলে সব সময় এই ডোঙা গুলো বিক্রি হয়। ঘের মালিকরা কেনেন বেশি। বর্ষার চারমাস লোকজনের জিরেন ( বিশ্রাম) থাকেনা। একটা ডোঙায় দেড়-দুই হাজার টাকা লাভ থাকে বলেও জানান প্রবীণ এই ডোঙা তৈরির কারিগর।

শেয়ার