Top

সাত হাজার টাকা মূলধন এখন দাঁড়িয়েছে কোটি টাকায়

০৩ আগস্ট, ২০২১ ৪:২৫ অপরাহ্ণ
সাত হাজার টাকা মূলধন এখন দাঁড়িয়েছে কোটি টাকায়
মুহাম্মদ দিদারুল আলম,চট্টগ্রাম :

মাত্র সাত হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে ৯ শতক জায়গায় নার্সারী শুরু করেছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ইকবাল ফারুক (৫০)। ২০০১ সাল থেকে সফলতার গল্পের শুরু। কঠিন পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সততার উপর ভর করে তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত নার্সারী ব্যবসায়ী। নাম দিয়েছেন বনরূপা নার্সারী। এখন তাঁর মূলধন প্রায় কোটি টাকা। বর্তমানে দুই একর জায়গার উপর নার্সারী করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে আরো তিন একর জায়গাজুড়ে নার্সারী করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। ইকবাল ফারুক মিরসরাই সদর ইউনিয়নের কিসমত জাফরাবাদ গ্রামের মৃত মজিবুল হকের ছেলে। পড়াশোনা শেষ করে চাকরীর পেছনে না ঘুরে নার্সারি পেশাকে আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।

প্রথমে কিছু বনজ ও ফলজ চারা দিয়ে তার নার্সারির যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার এ নার্সারি ব্যবসার পরিধি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে তার এ নার্সারিতে। এ নার্সারি ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখতে পাওয়ায় এখন তিনি কোটিপতি। ফারুকের নার্সারি ব্যবসার সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এ পেশায়।

ইকবাল ফারুক জানান, বর্তমানে ২ একর জমিতে তাঁর নার্সারী রয়েছে। এখানে প্রায় দেড় শতাধিক বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধী চারা রয়েছে। বিভিন্ন জাতের বনজ চারা ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের আম, জাম, কাঠাল, পেয়ারা, বেদানা, কমলা, আমড়া, শরিফা, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বড়ই, কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেতুল, চালতা, লিচু, বেল লটকের চারা রয়েছে। আমের জাতের মধ্যে হাঁড়িভাঙা, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিম সাগর, গুটি, ফজলি, গৌরমতি, কাঠিমণ, বারি-৪, বেনানা ম্যাঙ্গো, চিয়াংমাই, চাকাপাতসহ প্রায় ৩০ জাতের চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাছনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, বেলি, গন্ধরাজ, জবা, পাতাবাহার, ঝাউ গাছসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও। এছাড়া চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, মিরসরাই উপজেলা ছাড়া সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, রামগড়, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ এসে চারা সংগ্রহ করেন।

তিনি আরো বলেন, নার্সারী আমার ধ্যান, জ্ঞান। নার্সারী আমার জীবনের অংশ। ২০০১ সালে মাত্র ৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে আমি নার্সারী শুরু করেছি। আল্লাহর রহমতে আমার কাছে এখন প্রায় কোটি টাকা পুঁজি রয়েছে। এ ছাড়া আমি আরেকটি জায়গায় আরো বিশাল পরিসরে নার্সারী করার পরিকল্পনা নিয়েছি। নার্সারী গড়ে তোলার পর শুরুতে কেউ কেউ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেও পরবর্তিতে অনেকে আমাকে বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন। নার্সারী করে আমি ৬০ লাখ টাকা খরচ করে একটি বাড়ি করেছি। আমার নার্সারীতে সারা বছর ৬-৭ জন শ্রমিক কাজ করে। আর মৌসুমে ২২-২৫ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন।

ইকবাল ফারুক বলেন, আমার নার্সারী থেকে বিএসআরএম, ইসলামী ব্যাংকসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান চারা নিয়েছেন। এছাড়া গত বছর এখানকার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল ১ লাখ ১০ হাজার চারা নিয়ে গেছেন। তবে করোনাকালে চারা বিক্রি কমে গেছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় মাজহরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইকবাল ফারুক অনেক পরিশ্রমী ও উদ্যোগী মানুষ। তিনি ক্ষুদ্র পরিসর থেকে আজ অনেক বড় নার্সারী গড়ে তুলেছেন। তিনি আরো এগিয়ে যাবেন বলে আমি আশাবাদি।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। অনেক বেকার মানুষ নার্সারী করে স্বাবলম্ভী হয়েছেন। মিরসরাই উপজেলাতেও দিন দিন নার্সারীর সংখ্যা বাড়ছে। যারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চায়, আমরা তাদের সহযোগিতা দিয়ে থাকি।

শেয়ার