চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল হাইতকান্দি ইউনিয়ন। সীতাকুণ্ড-মিরসরাই দুটি উপজেলার বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে এই অঞ্চলের কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ২০ কিলোমিটার দুরে সীতাকুণ্ড কলেজ অথবা ১০ কিলোমিটার দুরে নিজামপুর কলেজ হলো উচ্চ শিক্ষার একমাত্র ভরসা।

নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজের পাশ্ববর্তী কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চ বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে রয়েছে মহানগর উচ্চ বিদ্যালয়,হাইতকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়, শাহেরখালী উচ্চ বিদ্যালয়, ডোমখালী বদিউল আলম উচ্চ বিদ্যালয়। মহালংকা উচ্চ বিদ্যালয়।

এসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে পড়ালেখার মান প্রশংসনীয় হলেও একটি কলেজের প্রয়োজনীতা স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পুরণ হয়নি। যুগযুগ এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের দুর্দশা দেখে যাচ্ছে এলাকার অভিভাবক ও মাধ্যমিক এর শিক্ষকরা। সামর্থ্য থাকলেও সাহস করে এগিয়ে আসেনি কোন শিক্ষানুরাগী।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

এই কলেজের আওতায় রয়েছে মিরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়ন ও শাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী,গজারিয়া, শাহেরখালী, হাইতকান্দি, মুরাদপুর, করুয়া, কচুয়া, মহালংকা, বালিয়াদি, জগদীশ পুর, তুলাবাড়িয়া গ্রাম।

সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর, দক্ষিণ বগাচতর, মহানগর, বারইয়াঢালা ইউনিয়নের মহালংগা বহরপুরসহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম।

মিরসরাই উপজেলায় শিক্ষা বিস্তারে বৃটিশ আমল থেকেই অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরিবার। তাঁর দাদা ছিলেন ফজলুর রহমান। তিনি ধুম ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ফজলুর রহমানের ৪ পুত্র ২ মেয়ের মধ্যে আলহাজ্ব ছৈয়দুর রহমান (এস রহমান) ছিলেন দ্বিতীয়।

তিনি সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, সন্দ্বীপসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রচুর দান-অনুদান চালু করেন। মিরসরাইতে যখন কোন কলেজ ছিলোনা এস রহমান নিজামপুরে একটি কলেজ স্থাপনের জন্য তৎকালীন সময়ে এককালীন ১০ হাজার টাকা দান করেন।

১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মিরসরাই-সীতাকুণ্ড থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সুযোগ্য পুত্র ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা প্রতিক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ২৫ মার্চ কালো রাতে স্বাধীনতাকামী জনতাকে নিয়ে শুভপুর ব্রীজে অগ্নিসংযোগ করে পাক সেনাদের চট্টগ্রাম অগ্রযাত্রা রুখে দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস প্রতিরোধ করেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হন।

১৯৭০ সালে তিনি সর্বপ্রথম ২৮ বছর বয়সে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮,২০১৪ এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনীতিতে আসার পর তিনি দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বাকশাল এবং ’৭৭ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া ১৯৮০ ও ৮৪ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯২, ১৯৯৬, ২০০৪ এবং ২০১২ সালে সভাপতি এবং একই সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এই বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি জাতীয় এবং সংসদীয় আসনে সামগ্রিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। শিক্ষা বিস্তারে রাখেন সর্বোচ্চ অবদান। কিন্তু আজীবন মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়া মানুষটি ৫০টি বছরের সোনালী জীবনে নিজের নামে ছিটেফোঁটা কিছুই করেননি। তিনি মানুষের জন্য করে তৃপ্তি পান বলে কখনো নিজের নামে প্রতিষ্ঠান করার কথা ভাবতেও পারেননি। নাম প্রচার থেকেও তাঁর কাছে কর্ম হলো মহান।

সেই প্রচারবিমূখ গুনী মানুষ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ৭৯ বছর বয়সেও এখনো মনে প্রাণে তারুণ্য। সময় সুযোগ পেলে ছুটে বেড়ান রাজনীতির ও মানুষের কল্যাণে। তাঁর নাম স্বরণীয় করে ১৪নং হাইতকান্দি ইউনিয়ন বাসিকে শিক্ষার আলো জ্বেলে সম্মানিত করতে কমরআলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে তথা উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে ২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজ।

এস রহমান ট্রাস্টের অর্থায়নে কলেজটি নির্মিত হচ্ছে। ইতোপূর্বে এস রহমান ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ, এস রহমান আইডিয়াল স্কুল সুনামের সাথে ও মানসম্মত ভাবে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ায় অবদান রেখে যাচ্ছে।

বহুল প্রতিক্ষিত এই কলেজ নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই। মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড দুই এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।

স্বপ্ন বাস্তবায়নের রুপকার হিসেবে সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

সুশিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নে ভাসছে কমরআলী বাসি। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজ নামে এটি এস রহমান ট্রাস্ট্রের অধীনে একমাত্র কলেজ। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুগযুগ জ্ঞানের আলো ছড়াবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে।