বর্ষা শুরুর আগেই অসময়ে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনা তীরবর্তী ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৭’শ একর জমির কালো বোরো ধানসহ অনান্য ফসল তলিযে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় সপ্তাহে চৌহালী উপজেলার দক্ষিণ এলাকার বেশকিছু বাড়ি-ঘর ও অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এছাড়াও হুমকিতে পড়েছে মিটুযানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিটুয়ানি উচ্চ বিদ্যালয়, চর সলিমাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, সম্ভুদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আজিজিয়া ফাজিল মাদরাসা, সুম্ভুদিয়া কবরস্থান ও বাজার, চৌবাড়িয়া কারিগরি কলেজ, পয়লা হাইস্কুল, চর সলিমাবাদ বাজার, ভুতের মোর কবরস্থান, পয়লা দাখিল মাদরাসা, বিনানই প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কাঁচা-পাকা সড়ক এবং আবাদি জমি। দক্ষিণ চৌহালীর বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানুই থেকে চর সলিমাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদীর বাম তীরে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন।

এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিনানই গ্রামের কৃষক মোঃ আয়নুল হক, মাহমুদ হাসান ও চরসলিমাবাদ গ্রামের আলী হোসেনসহ অনেকেই অভিযোগের সুরে জানান, বর্ষা আসতে না আসতেই যমুনার ভাঙনের তান্ডব শুরু হলেও ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা জানান, এই এলাকার যমুনার মাঝ নদীতে বিশাল চর জেগে ওঠায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দফায় দফায় পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মিটুয়ানি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি গত বছর থেকেই ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান। কর্তৃপক্ষ যদি জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে প্রায় ৫শ’ শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়টি বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।

বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে পাশ্ববর্তী খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের মানুষজন জানালেন খাষপুখুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। ভাঙন বিষয়ে চৌহালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক সরকার বলেন, বাঘুটিয়া ও খাষপুখুরিয়া বেশ কিছুদিন ধরেই শুরু হয়েছে যমুনার ভাঙন। ভাঙনে অনেক ফসলি জমিসহ বেশ কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে, বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করার কথা জানান। সিরাজগঞ্জ পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চৌহালী উপজেলার এতদিন টাঙ্গাইল নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে থাকা ওই অংশে যমুনার ভাঙন শুরুর বিষয়টি শুনেছি। অতিসম্প্রতি তবে ওই অংশটি সিরাজগঞ্জের আওতায় আসলেও এখনও অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি। টাঙ্গাইলের অধীনে থাকা অবস্থায় চৌহালীর ওই অংশে সাড়ে তিন কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাবনা একনেক মিটিংয়ে উপস্থাপনের জন্য দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

অপরদিকে প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে যমুনা ও তার শাখা নদী করতোয়া, বড়াল ও হুড়াসাগর নদীতে এখন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনাসহ এসব নদীতে ক্রমাগতভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী, বেলকুচি, শাহজাদপুর, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনা নদীর অভ্যান্তরে নিম্নাঞ্চলের কালো বোরো ধানসহ অনান্য ফসল তলিয়ে গেছে।

এতে নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকার প্রায় সাড়ে ৭’শ বিঘা (১’শ হেক্টর) জমির কালো বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকের। যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ফসলের আরো ক্ষতি হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।