সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অসংখ্য রাস্থাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি সরাতে কয়েকটি সড়ক কেটে ফেলা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পানি বাড়ছে, আর পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরে এখন হাঁটুপানি। ছাতক শহরের সঙ্গে সব ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মানুষের বাড়িঘর, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস সর্বত্রই এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। একই অবস্থা দোয়ারাবাজার উপজেলার। এ উপজেলা সদরের সঙ্গে সব ইউনিয়নে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৌরসভাসহ সব কটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। জেলা সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতক উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানি ঢুকছে মানুষের বাড়িঘরে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নতুবা নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হচ্ছে। খাদ্যসংকট দূর করতে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা। সেনাবাহিনী দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, তেরোরতন, যতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ও ঘাসিটুলা এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অনেক রাস্থায় পানি থই থই করছে। বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, সিলেট নগরের অন্তত ২০টি এলাকার পাশাপাশি জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় বেড়েছে জোঁক, সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব। চলাচলের জন্য মিলছে না নৌকা। ফলে জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে বেরোতে পারছেন না।

একাধিক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করছে। অন্যদিকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ- ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলাও জেলা শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।