প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো-স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পুরো সিলেট। বন্যার আঘাতের পর প্রথম দুদিন দ্রুত পানি নামতে শুরু করলেও গত ৪-৫ দিন ধরে পানি নামছে খুবই ধীর গতিতে। এ অবস্থায় আরও এক সপ্তাহ সিলেটবাসীকে বন্যাকবলিত থাকতে হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটর বিভিন্ন নদনদী, ছড়া-খাল, ছোট-বড় হাওর, জলাশয় এবং নিম্নঞ্চলে পানি কমার প্রবণতা খুব কম। এতে নিম্নঞ্চলের লোকজন এখনো পানিবন্ধি অবস্থায় আছে। অনেক উপজেলার সাথে জেলা শহরের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। উপজেলা ও পৌর শহরের সাথেও গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগ বন্ধ।

সিলেট শহরের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ ঘরে ফিরলেও উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া বানভাসি মানুষ এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। এদিকে সিলেটে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। দিনের কোন এক সময়ে ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যার পানির সাথে বৃষ্টির পানিও একাকার হয়ে পড়ছে। এতে ধীরগতিতে পানি কমার কারণে মানুষের মাঝে উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানিয়েছেন- পানি কমছে ধীরগতিতে। সুনামগঞ্জে পানি বেশি থাকায় সিলেট থেকে পানি নামতে সময় লাগছে। তবে আশা করা যাচ্ছে সপ্তাহখানেকের মধ্যে পানি নেমে যাবে।

অপরদিকে সিলেটে সুরমা নদীর পানি হঠাৎ বেড়েছে। তবে এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে পাউবো। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি না থাকলেও পাউবোর পানির পরিমাপে সোমবার (২৭ জুন) হঠাৎ পানি প্রবাহের পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা যায়। পাউবো সূত্রে জানা যায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। সেখানে সোমবার সকাল ৯টায় ১৩ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটারে ওঠে। নদীর সিলেট পয়েন্টেও গতকালের তুলনায় পানির প্রবাহের পরিমাণ বেড়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় নদীর পানি ১০ দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হলেও মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তবে কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি রোববার থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার দিয়ে অপরিবর্তিতভাবে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। সেখানে সোমবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। লুভা নদীর লুভা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার, সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে ১০ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট নগরীর নগরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, মূল সড়কগুলো থেকে পানি নেমে গেলেও পাড়া-মহল্লার ভেতরে পানি জমে আছে। এসব পানিতে ময়লা জমে কালো রং ধারণ করেছে। বাসিন্দারা এসব পানি মাড়িয়েই চলাফেরা করছে। এ ছাড়া নগরীর ছড়া, খালগুলো ময়লা–আবর্জনা পড়ে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

নগরীর মির্জা জাঙ্গাল এলাকার একটি ছড়ায় পানির ওপর ময়লা-আবর্জনা ভেসে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া তালতলা এলাকার ছড়ায়ও একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। দুদিন পর থেকে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। প্লাবিত হয় নগরী ও জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। বন্যাজনিত কারণে ১৭ মে থেকে এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে অর্ধশতাতিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।