পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্ব ব্যাংককে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠান কিছু বললেই যে তা বিশ্বাস করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। অনেক সময় তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের ফন্দি-ফিকির করে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পরবর্তী আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে বিদেশ অবস্থান করছেন ড. মোমেন। সেখান থেকে তিনি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

মোমেন বলেন, বিদেশিরা কিছু বললেই সেটা সত্য নয়। বিদেশিরা অনেক সময় অনেক ফন্দিফিকির করে। অনেক কিছু স্বার্থের জন্য তারা করে। তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়। ভেতরে এবং বাইরে তাদের (বিদেশিদের) রূপের ভিন্নতা রয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

তিনি বলেন, আমাদের অনেক পণ্ডিত বিদেশিদের কথায় বহু লাফালাফি করেছেন। তাদের বোধ হয় সেটা ভাবার সময় এসেছে। বিদেশিদের কথায় শুধু লাফালাফি করা ঠিক নয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর হওয়ার কারণে যারা আমাদের প্যাঁচে ফেলা এবং পেছনে টানার চেষ্টা করেছে সেটা থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। যারা আমাদের অপমান করেছে, যারা আমাদের অপবাদ দিয়েছে তাদের উচিত ক্ষমা চাওয়া। স্বেচ্ছায় তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। ক্ষমা চেয়ে গ্লানিতা দূর করা উচিত।

বিদেশিদের বক্তব্যই শ্রেষ্ঠ বক্তব্য নয় উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশের জন্য যেটা মঙ্গল হয়, আমাদের জনগণের জন্য যেটা শুভ হয় সেটাই আমরা করি। বিদেশিদের কথায় অনেকে লাফালাফি করেন। আমাদের বহু পণ্ডিত এসব করেন। পদ্মা সেতু আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, আমরা আমাদের মানুষের কথা চিন্তা করি। আমাদের দেশের অবস্থান বিবেচনা করি।

মোমেন বলেন, অর্থনৈতিকভাবে এটি আমাদের বড় অর্জন। কিন্তু সবচেয়ে বড় অর্জন আত্মবিশ্বাস। আরেকটি বড় অর্জন আমরা অপমান সহ্য করতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ পদক্ষেপ জাতিকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি তার (প্রধানমন্ত্রীর) সিদ্ধান্ত সঠিক। পদ্মা সেতু জাতিকে সম্মান দিয়েছে। আমরা সারা পৃথিবীকে জানান দিতে চাই বাঙালি পারে। আমার দেশ পারে। আমরা গরিব হতে পারি, আমাদের সম্পদের অপ্রতুলতা থাকতে পারে। কিন্তু বাঙালি জাতি সব পারে।

ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালি চাইলে তাকে দাবাইয়া রাখতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী আবার সেটা প্রমাণ করলেন। স্বাধীনতার পর এটা আমাদের দুর্লভ অর্জন। এটা আমাদের গৌরবের অর্জন। বঙ্গবন্ধু দেশকে চিনতেন, দেশের মানুষকে চিনতেন। ঠিক একইভাবে তার কন্যা দেশ এবং দেশের মানুষকে চিনেছেন।

‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরণ-শেখ হাসিনার অবদান বিশ্বজুড়ে গর্বিত আজ বাংলাদেশের কোটি প্রাণ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।

পররাষ্ট্র শাহরিয়ার আলম প্রতিমন্ত্রী ব‌লেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই পদ্মা সেতু তৈরি সম্ভব হয়েছে। এলডিসিভুক্ত অনেক দেশই বিদেশি সংস্থার ঋণের বেড়াজালে পড়েছে। পদ্মা সেতু তৈরির জন্য আমাদেরও এ বেড়াজালে পড়তে হয়েছিল। তবে সকল বেড়াজাল ভেদ করে সেতু তৈরি সম্ভব হয়েছে।

তিনি ব‌লেন, পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যান। তবে আমি মনে করি, স্প্যান একটি; সেটি হলো শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। তবে সেতু উদ্বোধনের পর এখন সেই সমালোচনা আর নেই।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, যে কোনো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন সাহস ও জনকল্যাণ। প্রধানমন্ত্রীর সাহস ও জনকল্যাণ প্রচেষ্টা ছিল। এটা না থাকলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন ছিল লিটমাস টেস্ট। বাংলাদেশ সেটাই পাস করেছে। পদ্মা সেতু এখন নতুন বাংলাদেশের পরিচয়। পদ্মা সেতু এখন নতুন ব্র্যান্ডিংয়ের নাম।

জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সেই সময়ে টক শোতে সঠিক তথ্য না জেনে শুনে অনেকেই কথা বলেছেন। এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান
উড়ো চিঠিও বিশ্বাস করেছে। তারা অর্থ সহায়তা থেকে সরে গেছে। অনেক ঘটনাই ঘটেছে। তবে এই সেতু নিয়ে যারা বিরোধিতা করেছিলেন, তারাও এখন খুশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের ফসল। এটা একটি মেগা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার। এখন আমাদের প্রয়োজন মেগা সোশ্যাল স্ট্রাকচার বাস্তবায়ন। সেটা সম্ভব হলে দেশের মানুষ আরও সুফল পাবে।