জ্বালানি তেল, সার, পরিবহণ ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অর্ধদিবস হরতাল সারাদেশের মতো পালিত হয়েছে চট্টগ্রামেও। কোন রকমের বাধার সম্মুখীন হতে দেখা যায়নি হরতাল সমর্থকদের।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকেই বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা হরতালের সমর্থনে নিউমার্কেটসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মিছিল ও সমাবেশ করে। দুপুর ১২টায় নিউমার্কেট মোড়ে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে হরতালের কার্যক্রম শেষ হয়।
হরতাল পালনে কোন রাজনৈতিক বা পুলিশি বাধা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বাসদ চট্টগ্রাম জেলার সদস্য ঋজু লক্ষী অবরোধ বলেন, ‘নাহ আমরা আজ তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হইনি। আমরা অন্যান্য সময়ের মতোই শান্তিপূর্ণভাবে হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছি, সমাবেশ করেছি। মিছিল সমাবেশে সাধারণ পথচারীরাও অংশ নিয়েছে। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামা অনেকেই আমাদের সাথে কথা বলার পর গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তাদের বুঝাতে পেরেছি যে তেল গ্যাস জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এসব কর্মসূচি সফল হলে তাদেরই লাভ।’
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সরকার বর্তমান সংকটে মানুষ বাঁচাতে দায়িত্বশীল আচরণ না করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েই চলেছে। সম্প্রতি মোটা চালসহ চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেল ও সারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে সর্বত্র মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনকে একেবারেই অতিষ্ঠ করে তুলছে। এরপর এই মূল্যবৃদ্ধি মানুষ কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না।’
‘সারাদেশের মানুষ এক দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। আমরা ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে আছি, হরতাল আহ্বান করেছি। সারাদেশের মানুষ আমাদের কর্মসূচির প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ব্যক্ত করেছে।’
‘এর মধ্যে পানির দাম সেপ্টেম্বর থেকে আবারও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও পাঁয়তারা চলছে। মূল্যবৃদ্ধির যাতাকলে সারাদেশে শ্রমজীবী মানুষই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
‘আজকে সরকার তার সকল প্রকার দূর্নীতি ও লুটপাটের ভার চাপিয়ে দিচ্ছে জনগণের উপর। তাই এই অন্যায় দুঃশাসন ও লুটপাটের বিরুদ্ধে দরকার জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধ।’
বক্তারা, এই সম্মিলিত প্রতিরোধের ধারবাহিকতায় ও জ্বালানী তেল, সার, পরিবহণ ভাড়া সহ সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজকের হরতালে সমর্থন ও অংশগ্রহণের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামীর সংগ্রামেও সকলকে পাশে থাকার আহবান জানান।
বিভিন্ন সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা সভাপতি কমরেড অশোক সাহা, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর, বাসদ জেলা ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, বাসদ নেতা মহিনউদ্দিন, সিপিবি জেলা সহসাধারণ সম্পাদক নূরুচ্ছফা ভূঁইয়া, বাসদ(মার্কসবাদী) জেলা সদস্য আসমা আক্তার, জাহেদুন্নবী কনক, সিপিবি নেতা অধ্যাপক কানাইলাল দাশ, বাসদ নেতা রায়হান উদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর সভাপতি দীপা মজুমদার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জেলা সভাপতি এ্যানি সেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর সভাপতি মিরাজ উদ্দিন।
এসময় বক্তারা বুধবার (২৪ আগস্ট) রাতে হরতালের প্রচারণার সময় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলসহ ৫ ছাত্রনেতাকে মারধর ও আটক করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।